এনআরসি নিয়ে মানুষকে অধিকার দেবে না। কিন্তু ভোটে জেতার জন্য টাকা সাপ্লাই করবে। এটা আসলে বিজেপির ‘খুড়োর কল’। সোমবার কোচবিহারে দলীয় কর্মীসভায় ঠিক এই ভাষাতেই কেন্দ্রের মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিজেপি-কংগ্রেস ও সিপিএমকে একযোগে বিঁধে তিনি বললেন, আমি পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ই বলেছিলাম বাংলায় সিপিএম, কংগ্রেস আর বিজেপি হল জগাই, মাধাই আর গদাই। এই জগাই, মাধাই, গদাইকে এবার একসঙ্গে বিদায় দিতে হবে। এটা আপনাদের চ্যালেঞ্জ।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার কোচবিহারে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল বেলা ৪টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার রাজবাড়ি সংলগ্ন স্টেডিয়াম ময়দানে হেলিকপ্টার থেকে নামেন। সেখান থেকে কর্মীসভায় যোগ দিতে পাশেই নেতাজি সুভাষ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলে যান। কর্মীসভায় প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী ও জনপ্রতিনিধি উপস্থিতিতে তিনি বলেন, আমি বড়, না ও বড় সেটা ভাবার দরকার নেই। আমরা সবাই সমান। তাহলেই আপনার কাজটা সফল হবে।
প্রথমেই রাজ্যে তিন কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনের ঠিক আগে ফের একযোগে বিজেপি-কংগ্রেস ও সিপিএমকে নিশানা করে তিনি বলেন, দিল্লীতে একে অপরের বিরুদ্ধে ভাষণ দেয়, আর এ রাজ্যে একসঙ্গে কাজ করে। এই তিন দলকেই ভোটের মাধ্যমে এ রাজ্য থেকে তাড়াতে হবে। পাশাপাশি দলীয় সংগঠন নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘তৃণমূলে কোনও গ্রুপ নেই। থাকবেও না। একটাই গ্রুপ— তৃণমূল কংগ্রেস, জোড়া ফুল, তেরঙ্গা ঝান্ডা। আর কোনও গ্রুপ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসে নেতা বড় নয়। কর্মীরা বড়। কর্মীরাই দলের সম্পদ। আমাদের দল কর্মীদের উপরে নির্ভর করে চলবে।’
এরপরই সংসদে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল সতর্কবাণী শোনান মমতা। বলেন, ‘ওটা হচ্ছে একটা খুড়োর কল।’ পাশাপাশি অবশ্য সকলকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘ভয় পাবেন না, বাংলা এমনই একটি জায়গা, সবাইকে মায়ের আঁচল দিয়ে রক্ষা করবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর গতকালের বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল এনআরসি প্রসঙ্গ। আসামে যে এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বলেন, ‘(বিজেপি) বলছে, হিন্দুরা বিতাড়িত হবে না। তা হলে (আসামে) ১৯ লক্ষের মধ্যে যে ১৪ লক্ষ হিন্দু বাঙালি আছেন, তাঁরা বিতাড়িত হলেন কী করে? অনেকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন।’
উল্লেখ্য, কোচবিহার এক দিকে আসাম লাগোয়া। অন্য দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত। আসামে এনআরসির পরে সব থেকে বেশি আঁচ যদি বাংলায় কোনও জেলায় লেগে থাকে, তা কোচবিহার। এই অঞ্চল রাজবংশীদের অন্যতম বাসস্থানও। আসামে এনআরসিতে তাদের নামও বাদ গিয়েছে। এবার এই জেলায় দাঁড়িয়েই মমতার তোপ, ‘এনআরসির বিরুদ্ধে (প্রস্তাবিত) নাগরিকত্ব বিলের কথা বলা হচ্ছে। ওটা কী? ওটা হচ্ছে একটা খুড়োর কল। যাঁরা এখানকার নাগরিক, ছ’বছরের জন্য তাঁদের বিদেশি বানিয়ে দেবে। তার পর ছ’বছর বাদে যখন ওঁরা থাকবেও না। তখন নাকি ঠিক করবে, কে নাগরিক হবে আর কে হবে না!’
এর পরেই মমতার আশ্বাসবাণী, ‘আমি বলছি বাংলায় আপনারা সবাই নাগরিক। আপনাদের সকলের অধিকার আছে।’ তাঁর সাফ কথা, ‘মনে রাখবেন, আপনাদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড আছে। কারও গাড়ির লাইন্সেস আছে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু আছে। তাই এ সব নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বাংলা এমনই একটি জায়গা, সব মানুষকে কোলে করে আমরা রক্ষা করব। মায়ের আঁচলের তলায় আমরা রক্ষা করব।’ একই সঙ্গে মমতা এ কথাও জানিয়ে দেন যে, বাংলার ভবিষ্যৎও গড়ে দিয়ে যাবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘যা কাজ করার আমি করব। আমার ওপর ছেড়ে দিন। বাংলার ভবিষ্যৎও তৈরি করে দেব।’