গত ৫ আগস্ট সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। অবশেষে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর। তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সম্পূর্ণ ভাবে অচলাবস্থা কাটেনি উপত্যকায়।
নিষেধাজ্ঞার ১০১তম দিনে দাঁড়িয়েও চালু হয়নি ইন্টারনেট। এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যও করছে না কেন্দ্র। অথচ পড়াশোনা থেকে ব্যবসা— সবই মুখ থুবড়ে পড়ছে ইন্টারনেট না থাকায়। সেই ৫ আগস্ট থেকেই বন্ধ স্কুল-কলেজ। বাড়িতে ইন্টারনেট থাকলে তা-ও স্কুলের সঙ্গে যোগ থাকত। কিন্তু তা না হওয়ায় উপত্যকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার এখন ছন্নছাড়া দশা। এমনকী সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রথম ধাপ পার করেও শুধু ইন্টারনেট নেই বলে পঠানকোটে গিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার ফর্ম অনলাইনে জমা দিতে হচ্ছে বহু পড়ুয়াকে!
উপত্যকার সাংবাদিক সাবির ইবন ইউসুফ বলছেন, ‘খবর জোগাড় থেকে ‘কপি’ পাঠানো— গোটাটাই এখন আমার কাছে যুদ্ধ…আমি কাজে বেরোই সকাল ১১টায়। প্রেস ক্লাবে যাই, তার পরে সরকারের তৈরি করা মিডিয়া সেন্টারে। খবর জোগাড় করতে ঘণ্টা দুয়েক কাটে। ৩টে অবধি খবর লিখে পেন ড্রাইভে সেই কপি নিয়ে আবার মিডিয়া সেন্টার দৌড়। সেখানে ঘণ্টাখানেক লাইন দিয়ে কম্পিউটারে বসতে পাই।’
তিনি আরও বলেন, আগে খবরের খোঁজে যে কোনও জায়গায় নিজে যেতে পারতাম, যে কোনও জায়গায় বসে স্টোরি পাঠাতে পারতাম। এখন ইন্টারনেট নেই বলে বাড়ি থেকে মিডিয়া সেন্টার— এক কিলোমিটার যাওয়াটা রোজকার রুটিন। মিডিয়া সেন্টারেও এত ভিড়, ইন্টারনেটে বসে কয়েকটা ওয়েবসাইট দেখার কোনও প্রশ্ন নেই। অনেক সময়ে অফিসের মেলও চেক করতে পারিনি। নিজের কপি পাঠিয়েই কম্পিউটার ছেড়ে দিতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়। জরুরি চিঠিপত্রও এসে পৌঁছচ্ছে না উপত্যকায়। কাশ্মীরের কুরিয়র সংস্থাগুলোর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট জাহুর কারি জানালেন, কড়াকড়ি শুরুর দিন থেকে তাঁদের কাজকর্ম প্রায় বন্ধই। কারণ চিঠি বা পার্সেল কোথায়, কাকে পাঠাতে হবে, তা কখন, কী অবস্থায় আছে— এই পুরো সমন্বয়টা তো ইন্টারনেটেই হয়। জাহুরের অভিযোগ, ‘অনেকে জীবনদায়ী ওষুধ আনাতে পারছেন না। কেউ কেউ অন্য রাজ্য থেকে প্যাথলজির পরীক্ষা করান। রক্তের নমুনা কুরিয়রে যেত। বাড়িতে বসে দেখা যেত রিপোর্ট। সে সব কিছুই হচ্ছে না।’
আবার পর্যটনেও ইন্টারনেটের ভূমিকা বিরাট। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সেখানেও। পর্যটন ব্যবসায়ী নাসির শাহ বললেন, ‘ইন্টারনেটে বুকিং কনফার্ম করতে আমাকে জম্মু যেতে হয়েছিল। গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করাটাই মাথাব্যথা।’ সীমাহীন দুর্দশা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ইয়াফের নাজির বললেন, ‘বেশির ভাগ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উপত্যকা থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে। যারা কাজ দিচ্ছে, তারা তো ইন্টারনেট নেই বললে শুনবে না! ফলে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে সংস্থাগুলোর।’