চাহিদা কমার জেরে দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে বহু দিন। ৮ বছরের তলানিতে শিল্পোৎপাদন। এই পরিস্থিতিতে যখন সদ্য নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন থেকে শুরু করে একের পর এক পরিসংখ্যান ক্রমাগত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে কমে যাওয়া তো অনেক দূরের কথা, দিনকে দিন যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে অর্থনীতির ‘অসুখ’, তখনও ভারতে ব্যবসা করার পথ সহজতর হচ্ছে বলে তাদের সাফল্য তুলে ধরতে মরিয়া মোদী সরকার। সৌজন্যে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠিতে ৬৩ নম্বরে উঠে আসা। তবে এবার টেলিকম শিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্থা ভোডাফোনের বার্তা কার্যত সেই সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল।
টেলিকম অপারেটর সংস্থাগুলির ওপর চড়া হারে কর ও অন্যান্য চার্জ না বন্ধ করলে ভারত থেকে পাততাড়ি গোটাতে পারে ভোডাফোন। এই জল্পনা উস্কে দিয়ে টেলিকম বহুজাতিকটির চিফ এগজিকিউটিভ নিক রিড মঙ্গলবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার মাত্রাতিরিক্ত কর ও চার্জ নেওয়া বন্ধ না করলে ভারতে ভোডাফোনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। আসলে টেলিকম অপারেটর সংস্থাগুলির অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর)-এর সংজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে দুই অপারেটর ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। কারণ, ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেল-কে পুরনো বকেয়া বাবদ সরকারকে মেটাতে হবে যথাক্রমে ৪০,০০০ কোটি ও ৪২,০০০ কোটি টাকার মতো।
প্রসঙ্গত, এ দেশে গোড়ায় একাই ব্যবসা করলেও, ২০১৮ সালে আইডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে ব্রিটিশ বহুজাতিক ভোডাফোনের ভারতীয় শাখা ভোডাফোন-ইন্ডিয়া। কিন্তু তারপর চলতি অর্থ বছরের প্রথম অর্ধে প্রায় ১৯০ কোটি ইউরো লোকসান হয়েছে সংস্থার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রিড বলেছেন, ভারতে দীর্ঘ দিন ধরে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছে তাঁদের ব্যবসা। তাঁর কথায়, ‘নিয়মে অসহযোগিতা, মাত্রাতিরিক্ত কর এবং সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। যার ফলে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপছে।’ একইসঙ্গে, ভারতে শেয়ার মূলধন ঢালার ক্ষেত্রে তাঁর সংস্থার যে কোনও দায়বদ্ধতা নেই। এমনকী সংস্থাটির শেয়ারের দামে ভারতের ব্যবসার অবদান কার্যত শূন্য, সেটাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, চড়া করের পাশাপাশি সংস্থার আয়ের কোন হিসেবে লাইসেন্স ফি বা স্পেকট্রাম ব্যবহারের চার্জ কত হবে, তা নিয়ে পুরনো সংস্থাগুলির সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছিল টেলিকম দফতরের। সম্প্রতি শীর্ষ আদালত ডটের পক্ষেই রায় দেওয়ায় বিপুল বকেয়া মেটাতে হবে সংস্থাগুলিকে। এই সব মিলিয়েই ক্ষুব্ধ ব্রিটেনের সংস্থাটি। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে ভোডাফোন অবশ্য কেন্দ্রের কাছে একটি ত্রাণ প্যাকেজের আর্জি জানিয়েছে। ওই প্যাকেজে স্পেকট্রাম বাবদ অর্থ মেটানোর ক্ষেত্রে দু’বছরের মোরাটোরিয়াম, কর ও লাইসেন্স ফি কমানো এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে যে বকেয়া মেটাতে হবে তার থেকে সুদ ও জরিমানা মকুব করার আবেদন জানানো হয়েছে। ত্রাণ প্যাকেজ না পেলে কি এ দেশে ভোডাফোনের ব্যবসা করার সম্ভাবনা কতটা? উত্তরে নিকের জবাব, ‘বলা ভাল যে পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক।’