দিনকয়েক আগেই উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে কমিশন। আর তারপরে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করেই খড়গপুরে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। কংগ্রেস ও বামসমর্থিত প্রার্থীর নামও ঘোষণা হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই আসনে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি বিজেপি। কারণ আর কিছুই না। প্রার্থী কে হবেন? তা নিয়ে দলের অন্দরে চলতে থাকা গোষ্ঠীকোন্দল।
প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছে প্রার্থী হচ্ছেন প্রেমচাঁদ ঝা। দিলীপ ঘোষ জেলায় থাকলে সবসময়ই তাঁর পাশে পাশে দেখা যায় যাঁকে। লোকসভা ভোটে নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন এই প্রেমচাঁদ। দলের অনুগামীদের জানিয়েছেন, তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন বলে আভাস পেয়েছেন। এদিকে বিজেপির একসময়ের কর্মিসমিতির সদস্য প্রদীপ পট্টনায়েকের দাবি, তিনিই প্রার্থী হবেন। অন্তত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে সেরকমই আভাস পেয়েছেন। দিলীপ ঘোষের এই কট্টর সমালোচক উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে ভোট ময়দানে নেমে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খড়গপুরে প্রতিটি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছেন প্রদীপ। একবার লোকসভা নির্বাচনেও লড়েছেন। কোণঠাসা হয়ে পড়া লালকৃষ্ণ আডবানী, মুরলি মনোহর যোশিদের অত্যস্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন তিনি। তাঁরা প্রদীপের হয়ে সভাও করেছেন। তবে সেসব দিন গেছে। আডবানীর মতো খড়গপুরে দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র বিজেপির মুখ হয়ে থাকা প্রদীপও এখন দলে ফিকে হয়ে গেছেন।
এক সময়ে খড়গপুরে বিজেপির কোনও সংগঠনই ছিল না। তখন থেকেই এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগঠন বাড়িয়েছেন প্রদীপ। আর ২০১৪ সালের পর দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে যখন বিজেপিতে নতুন মুখ বাড়তে থাকে, তখনও খড়গপুরে সংঘঠনের রাশ ছিল তাঁর হাতে। তবে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ জয়ী হওয়ার পর থেকেই দলে ব্রাত্য হতে থাকেন প্রদীপ। তাঁর আক্ষেপ, ‘দলের জন্য কী করিনি? দিনরাত এক করে দলের কাজ করেছি। আজ সুদিনে অনেক নতুন মুখের ভিড় বেড়েছে। তাঁরা সকলেই ক্ষমতার লোভে দলে আসছেন। এরকম চললে আগামী দিনে বিজেপির ক্ষতি।’
নিজে কি প্রার্থী হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রদীপ বলেন, ‘মনোনয়ন পত্র তুলেছি। জমানতের টাকা জমা করেছি। প্রার্থী হব বলেই এসব করেছি।’ এবিষয়ে বিজেপি নেতা প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, ‘রাজ্য নেতৃত্ব আমাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। প্রস্তুত আছি। দল সবুজ সঙ্কেত দিলেই মনোনয়নপত্র জমা দেব।’ ফলে লোকসভা ভোটের মতো উপনির্বাচনেও যে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বঙ্গ বিজেপিকে, তা বলাই বাহুল্য।