প্রকাশ্যে যতই হম্বিতম্বি দেখাক বিজেপি অন্দরমহল কিন্তু বেশ টলোমলো। সেকথা প্রমাণ করে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই। দিন কয়েক আগে সংকল্প যাত্রাকে ঘিরে একাধিকবার সামনে এসেছে গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠী কোন্দলের কথা। এবার সামনে এল বসিরহাট জুড়ে বিজেপির কোন্দলের কথা।
বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা, গালিগালাজ, মারধরের ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক দিনে। বিজেপি সূত্রের খবর, তাদের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার অধীন ৩০টি মণ্ডল আছে। ইতিমধ্যে ওই সব মণ্ডলগুলির সভাপতি নির্বাচন শুরু হয়েছে। তাতেই বিজেপির ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার নিয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হওয়ার পর থেকে গণেশ ঘোষকে দলের একটা গোষ্ঠী মেনে নিতে পারছে না। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী জমি হারানোর ভয়ে মণ্ডল সভাপতি পদে নিজেদের পছন্দের লোককে দেখতে চাইছে। পাল্টা বিরোধী গোষ্ঠীর পক্ষে প্রার্থী দেওয়ায় গন্ডগোল বাধছে।
হিঙ্গলগঞ্জে বিজেপির এক কর্মীর বাড়িতে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন ঘিরে ঢালাও খরচ নিয়েও বিরোধী গোষ্ঠীর পক্ষে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একই ভাবে সন্দেশখালিতে বিপ্লব মণ্ডল ও শিবু পান্ডার অনুগামীদের মধ্যে গন্ডগোল, হাতাহাতি বাধে। শুক্রবার বসিরহাটে সংগ্রামপুরেও একই বিষয় নিয়ে গন্ডগোল হয়। বাদুড়িয়ার চাতরায় মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে রঞ্জিত মণ্ডল ও বিরোধী গোষ্ঠীর অর্জুন দে-সুপ্রীতি সরকারের মধ্যে গন্ডগোল বাধে বলে অভিযোগ।
দিন কয়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জ গ্রামীন মণ্ডলের সভাপতি নির্বাচনে রিগিং হয়েছে বলে এক পক্ষের অভিযোগ। তা নিয়ে দলের হয়ে রিটার্নিং অফিসার হয়ে আসা ব্যক্তির সঙ্গে বচসা বাধে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বয়স ভাঁড়িয়ে এক জনকে সভাপতি করা হবে বলে আগে থেকে ঠিক ছিল বলে এক পক্ষের অভিযোগ। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছের লোক হওয়ায় এক জনকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এখানে।
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি শুরুর মুখেই উভয় পক্ষের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়ে যায়। জেলা সভাপতির অনুগামীরা দলীয় সংগঠনের ভোটার তালিকা ছিঁড়ে ফেলে বলে অভিযোগ। দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে মারামারি-ভাঙচুর হয় বলে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি। শেষে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন স্থগিত করে দেন দলের নেতা রাকেশ মৃধা। জেলা সভাপতি গণেশ ঘোষ অফিস ছেড়ে চলে যান।
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির জেলা নেতারা যথেষ্ট বিব্রত। বিজেপির বসিরহাট জেলা সভাপতি গণেশ ঘোষ অবশ্য নিজেদের ভাবমূর্তি বলেন, ‘‘এটা গোষ্ঠী কোন্দল নয়। মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা”। তিনি মুখে যাই বলুন না কেন, সাধারণ মানুষ তাতে ভুলছেন না, বরং উল্টে প্রশ্ন তুলছেন, বচসা, গালিগালাজ, মারধর কি করে প্রতিযোগিতা হতে পারে?