রাজকীয় প্রত্যাবর্তন বোধহয় একেই বলে। গত রবিবার শহরের দুই দল মোহন বাগান ও এটিকে দুই দলই হেরেছিল। পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুই দলই দুর্দান্ত জয় পেল শুক্রবার। যুবভারতীতে নবাগত ফ্র্যাঞ্চাইজি হায়দ্রাবাদ এফ সি’কে পাঁচ গোলে পর্যদুস্ত করে আইএসএলে দুরন্তভাবেই ঘুরে দাঁড়াল এটিকে।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন করা কোচের ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়া কলকাতা হঠাৎ-ই চাঙ্গা। অনেকদিন পরে লাল-সাদা জার্সি আগুন ঝরাচ্ছে। পাসের বৈচিত্র, আচমকা ডাউন দ্য মিডল রানের ঝলকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল হাবাসের দলকে। ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা কঠিন, তবে এ দিনের এটিকে যে মসৃণভাবে হায়দরাবাদকে নাস্তানাবুদ করল তা বহুদিন দেখেননি এটিকে সমর্থকরা। গত পাঁচ বছরে কখনও পাঁচ গোলে জেতেনি কলকাতা। যদিও স্পেনীয় কোচ বলছেন, ‘‘পাঁচ গোল বড় ব্যাপার নয়, দল প্রথম ম্যাচের ছন্দই ধরে রেখেছে। এতেই খুশি। এই গতি ধরে রাখতে হবে।’’
কাল এটিকে রেফারির আনুকুল্য পেল ডেভিড উইলিয়ামসের প্রথম গোলটির ক্ষেত্রে। ২৫ মিনিটে উইলিয়ামস প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে গোলের সময়ে অফ সাইডে ছিলেন। দুই মিনিট পরেই এটিকে’র ব্যবধান বাড়ান অস্ট্রেলিয়া লিগ থেকে আসা রয় কৃষ্ণ। শুক্রবার ম্যাচে ডেভিড ও কৃষ্ণর মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া দেখা গিয়েছে। এদিন ৬০ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট না করলে ডেভিড উইলিয়ামস হ্যাটট্রিকও পেতে পারতেন। ৪৪ মিনিটে তাঁর করা দ্বিতীয় গোলটি ম্যাচের সেরা। ওটি ছিল এটিকে’র তৃতীয় গোল। ডেভিড উইলিয়ামসই ম্যাচের সেরা হয়েছেন। এদিনের ম্যাচ দেখাল এবারের আইএসএলে তিনি বড় আকর্ষণ হতে পারেন। ম্যাচের পর তিনি বলেন,‘ ভবিয্যতে এই মোমেন্টটাম ধরে রাখতে হবে। তবে অনেক পথ পার হাওয়া বাকি।’
বিরতিতে এটিকে এগিয়ে ছিল তিন গোলে। শুক্রবার শেষ পাঁচ মিনিটে পরিবর্ত এডু গার্সিয়া দুটি গোল করে সুপার সার হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করেন। ডেভিড উইলিয়াস ও রয় কৃষ্ণ আসায় গত দুই বছর এটিকে’র আশা ভরসা প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছিলেন না। ৭০ মিনিটে মাঠে নামার পর তাঁর মধ্যে ছিল বাড়তি জোশ। শেষ পাঁচ মিনিটে এডু গার্সিয়ার দুটি গোলের জন্যই ঘরের মাঠে গত ছয় বছরে সবথেকে বড় ব্যবধানে জয় পেল এটিকে। এদিন দেখা গেল, শেষ মুহূর্তে আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হায়দ্রাবাদ দলটি মোটেই তৈরি নয়।
হাবাস বরাবর রক্ষণাত্মক মোড়কে দলকে পাল্টা আক্রমণের তত্ত্বে বিশ্বাসী। মাদ্রিদের অ্যাটলেটিকো থেকে যখন এসেছিলেন এরকম মনোভাব নিয়েই মাঠে নামতেন তিনি। ফলে বেশিরভাগ ম্যাচ ড্র করত তখনকার অ্যাটলেটিকো দে কলকাতা। মাদ্রিদের ক্লাবের সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর নাম পাল্টেছে। দলের নাম এটিকে। হাবাসও বদলে ফেলেছেন রণনীতি। বদলের অন্যতম কারণ রয় ও উইলিয়ামসের মতো দুই স্ট্রাইকারকে এক সঙ্গে পেয়ে যাওয়া। হাভিয়ার হার্নান্দেজের মতো অ্যাটাকিং মিডিয়ো রয়েছেন। সব চেয়ে বড় কথা, সোসাইরাজের মতো একজন রয়েছেন, যিনি আদতে উইং-মিডিয়ো হয়েও একটু নীচু থেকে খেলে ভাঙতে পারেন প্রতিপক্ষ রক্ষণকে। হাবাসের সহকারী সঞ্জয় সেন তাঁকে নিয়ে আসেন এটিকেতে। হাবাসের সব অস্ত্রই এ দিন ঝলসে উঠল যুবভারতীতে।
হায়দ্রাবাদে আদিল খান-সহ তিন ভারতীয় ফুটবলার দলে। সঙ্গে মার্সেলিনহোর মতো বিদেশি। তা সত্ত্বেও পল ব্রাউনের দল দাঁড়াতেই পারল না। এটিকে গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে একবারও বিপদে। বিরতির পর একটু নড়াচড়া করেছিল মহম্মদ হাবিবের শহরের দল। কিন্তু মাঝমাঠে প্রণয় হালদারকে নামিয়ে রক্ষণ জমাট করে দেন হাবাস।