লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে উঠেছিল গেরুয়া ঝড়। কিন্তু মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই বদলে গেছে সেই চিত্র। এবার আর তেমন খাটল না মোদী ম্যাজিক। বরং দেখা গেল, ক্রমশই খসে পড়ছে পদ্মের পাপড়ি! হরিয়ানায় জোর ধাক্কা। মহারাষ্ট্রে টেনে-টুনে পাশ। হরিয়ানায় প্রাপ্ত ভোটের হার লোকসভার তুলনায় ২২ শতাংশ কমেছে বিজেপির। লোকসভায় ছিল ৫৮ শতাংশ, এবার ৩৬.৩ শতাংশ। মহারাষ্ট্রেও শিবসেনার সঙ্গে জোটের কারণে চাপের মুখে থাকতে হবে বিজেপিকে। সেখানেও ডাহা ফেল করেছে প্রাক-নির্বাচনী এবং বুথফেরত যাবতীয় সমীক্ষা। তাই সরকার গড়লেও উদ্ধব ঠাকরেদের জোরজুলুম স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই দেবেন্দ্র ফড়নবিশের কাছে। পাশাপাশি বিধানসভার উপনির্বাচনে গুজরাতে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি, আর বিহারে শরিক জেডি(ইউ)। অন্যান্য রাজ্যেও বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলি গত লোকসভা ভোটের থেকে ভাল ফল করেছে।
এবার কাজে আসেনি জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপ, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক এবং জাতীয়তাবাদের পুরনো ধুয়ো। তাই হরিয়ানার ফল ঘোষণা হতেই জেজেপি ও নির্দল বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। গতকালই মোদী দিল্লীতে সংসদীয় দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের আগে টুইট করে মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি হরিয়ানাতেও সরকার গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যা দেখে হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা দীপেন্দ্র সিং হুডা অভিযোগ করেছেন, নির্দল প্রার্থীদের ওপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে বিজেপি। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ খট্টর সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। কংগ্রেসের তরফে জেজেপি এবং নির্দল বিধায়কদের কাছে বিজেপি-বিরোধী সরকার গড়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ একই আর্জি জানিয়েছেন দীপেন্দ্রর বাবা, মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার ভূপিন্দর সিং হুডাও।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রে মোট ২৮৮টি আসনের মধ্যে গতবার একা লড়ে বিজেপির ঝুলিতে ছিল ১২২টি। সেবার সব আসনেই লড়েছিল তারা। এবার শিবসেনাকে ১২৪ আসন ছাড়ার পর ১৯-২০টি আসন কমেছে তাদের। শতকরা ভোটের হারও কমেছে। বিজেপি-শিবসেনা জোট পেয়েছে ১৬১টি আসন। যেখানে জোটের আশা ছিল ২০০। স্বভাবতই ধাক্কা। ফল প্রকাশের পরই শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে বলেন, ‘শিবসেনা ও বিজেপির জোট অটুট থাকবে। তবে হিসেব হবে ৫০-৫০।’ পরে সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এবারেই প্রথম ঠাকরে পরিবারের কেউ নির্বাচনী ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং জিতেছেন। তিনি আদিত্য ঠাকরে। আদিত্যকে সামনে রেখেই এগোচ্ছে সেনা। মনে করা হচ্ছে, অতীতে উত্তরপ্রদেশের ঢঙে আড়াই বছর করে সরকার চালানোর সূত্র সামনে আনতে চলেছে সেনা। সবমিলিয়ে এই কথা স্পষ্টই যে, লোকসভা ভোটে গেরুয়া ঝড় উঠলেও দুই রাজ্যের ভোটে দেখা গেল, খসতে শুরু করেছে পদ্মের পাপড়ি।