শহর ঘিরে থাকা নেভা নদীর ধারে পুশকিনের পাশাপাশি অনেক ‘ডুয়েল’এর সাক্ষী জারের আমলের রাশিয়ার রাজধানী। আজ সেখানে অন্যরকম ডুয়েলে নামছেন ফরাসি বিশ্বজয়ী অধিনায়ক দিদিয়ের দেশঁ এবং তাঁর সতীর্থ থিয়েরি অঁরি। এই যুদ্ধ দেখার জন্য চড়ছে উত্তেজনার পারদ।
ফরাসি বিশ্বজয়ী অধিনায়ক দিদিয়ের দেশঁ এবার এমবাপে, গ্রিজম্যানদের হেড স্যার। দেশঁর সতীর্থ হেরনি অঁরি বেলজিয়ামের সহকারী কোচ। দর্শকদের মতো কোচেদের জয় দেখতে মরিয়া দু দলের ছাত্ররাও। তবে মাঠের যুদ্ধ রেশ পড়েনি দেশঁ ও অঁরির বন্ধুত্বে। একে অপরের বিরুদ্ধে সম্মান দেখাচ্ছেন তাঁরা।
দেশঁ এবং তাঁর অধিনায়ক হুগো লঁরিসের প্রেস মিটে অঁরি প্রসঙ্গ বাধ্যতামূলক ছিল। দেশঁর মন্তব্য, ‘আমি থিয়েরির জন্য খুব খুশি। ওকে খুব পছন্দ করি। ও যখন খেলছে, আমি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পথে। থিয়েরি তো বেলজিয়ামে যাওয়ার সময় জানত না, এমন পরিস্থিতি হবে একদিন। আমার ভালো লাগছে, ওর সঙ্গে কাল দেখা হবে বলে।’ লঁরিস মন্তব্য করলেন, ‘আমার সৌভাগ্য, আমি ওর সঙ্গে দুটো মরসুম ফ্রান্সের হয়ে খেলেছি। ওর হৃদয় কাল দুটো ভাগ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, ও এক জন ফরাসি।’
হতে পারে বেলজিয়ামের সহকারী কোচ। মুখে বলছেন, দেঁশ ভালো কোচ। ফ্রান্সও খুব ভালো খেলছে। সেমিফাইনালে যখন ছেলেরা মাঠে খেলবে তখন মন কাকে সমর্থন করবে, দেশ নাকি নিজের ছাত্রদের? সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না ফ্রান্সের বিশ্বজয়ী ফুটবলার।
কোচ হিসেবে অবশ্য দেশঁর ধারাবাহিকতা ঈর্ষা করার মতো। বিশ্বকাপ জিতলে তিনি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ারের পাশাপাশি চলে আসবেন কোচ ও অধিনায়ক হিসেবে কাপ জেতার জন্য।
বেকেনবাউয়ার জার্মানিকে কোচিং করিয়েছিলেন ৭ বছর। মার্সেইকে দুবছর। বায়ার্নকে ৩ বছর। ৫১ বছর বয়সে তিনি কোচিং ছেড়ে দেন। ৪৯ বছরের দেশঁ ২০১২ সাল থেকে ফ্রান্সের জাতীয় কোচ। ৫ বছর ছিলেন মোনাকোয়। দুবছর জুভেন্তাসে। চার বছর মার্সেইতে। জিদানের জন্মশহর মার্সেই কোথাও মিলিয়ে দিয়ে গিয়েছে দেশঁ এবং বেকেনবাউয়ারকে।
দুটো প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধে দেশঁর ফাইনালের পথে প্রধান কাঁটা অঁরির তিন ছাত্র। ইডেন হ্যাজার্ড, কেভিন দে ব্রুইনি এবং রোমেলো লুকাকু। এঁদের মধ্যে হ্যাজার্ড বড় হয়েছেন বেলজিয়ামের ফরাসি ভাষী অঞ্চলে। চোদ্দো বছর বয়সে তিনি বাবা-মা-ভাইদের সঙ্গে ফ্রান্সের লিল শহরে চলে আসেন ফুটবল খেলার জন্য। ১৯৯৮ সাল দেশঁর ফ্রান্স যখন বিশ্বকাপ জিতছে, সে সময় হ্যাজার্ড ভাইয়েরা নীল ফরাসি জার্সিতে উৎসব করতেন। হাতে থাকত জ্যান্ত মুরগি, ফরাসি ফুটবল টিমের প্রতীক। ফরাসি লিগের টিম লিলেই তিনি ৬ বছর ছিলেন। সেখানে নজরকাড়া খেলার পর তাঁকে নিয়ে যায় চেলসি।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল পেয়ে জিতলে হ্যাজার্ড উৎসব পালন করবেন অবশ্যই। ফরাসি সুপারস্টার গ্রিয়াজমান উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গোল করে সেলিব্রেট না করায় ফ্রান্সে সমালোচিত হচ্ছেন। বলা হচ্ছে, তুমি এমন হলে যে, বিশ্বকাপ গোলে সেলিব্রেট করতে পারো না? আসলে উরুগুয়ে টিমে দিয়েগো গোদিন সহ আতলেতিকো টিমের অনেকে গ্রিয়াজমানের প্রাক্তন সতীর্থ। গ্রিয়াজমানের সন্তানের গডফাদার আবার গোদিন। আশা করা যায় বেলজিয়াম জিতলে ফরাসী অঁরি এমনকরবেন না।
অনের ফুটবল বিশেষজ্ঞই এমবাপের খেলার স্টাইলের সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মিল পান বেলজিয়াম সহকারী কোচ অঁরির। দেশঁর সোনার টিমের আর এক মিডফিল্ডার দেসাই তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই বয়সে এমবাপের যা গুণ আছে, অঁরির তা ছিল না। তবে অঁরির ছিল বুদ্ধি, মাথা আর বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য খিদে। অঁরির ৭৫ ভাগ পেলেও এমবাপেকে আটকানো যাবে না। ওকে দেখে অঁরি ‘জয়ের খিদের’ ব্যাপারটা মনে পড়ে যাচ্ছে।’
মাঠের যুদ্ধ। মাঠের বাইরেও যুদ্ধ। যুদ্ধ দুই দেশের কোচেদের ক্ষুরধার মস্তিকেরও। অঁরির ক্ষেত্রে যুদ্ধের পরিধিএকটু বেশি। পেশাদারিত্বের মোড়কে তাঁকে আড়েলে লড়তে হবে জাতীয়তাবাদের আবেগের বিরুদ্ধেও। সব মিলিয়ে বেলজিয়াম ফ্রান্সের সঙ্গেই দেঁশ ও অঁরির যুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব।