অর্থনীতিতে ফের নোবেল এসেছে বাঙালির ঘরে। গত সোমবার দুপুরেই নোবেল কমিটি ঘোষণা করে বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে কাজ করার জন্যেই অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তিনি, তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো এবং মাইকেল ক্রেমার। তবে সারা পৃথিবী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এত বিস্তারিত জানার অনেক আগেই কিন্তু তাঁকে চিনে ফেলেছিল দক্ষিণ ২৮ পরগনার বারুইপুরের মোল্লাপাড়া। বিশেষত মোল্লাপাড়ার মহিলারা।
২০১২ সাল। এসথার ডুফলোকে নিয়ে মোল্লাপাড়ায় যান অভিজিৎ। এলাকায় অবশ্য তিনি পরিচিত হলেন ‘বড় বাবু’ হিসেবে। সাদামাটা মানুষ, ইংরেজি বলেন অক্লেশে। কিন্তু গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিখাদ, একেবারে ওদের মতোই বাংলা। একটাও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতেন না। এই অতিসাধারণ বিষয়টাই গ্রামবাসীদের কাছে তাঁকে মুহূর্তের মধ্যে জনপ্রিয় করে দিয়েছিল। গ্রামের বাড়ির উঠোনে বসে মুড়ি-চানাচুর খেতেন। আর মহিলাদের বোঝাতেন স্বাবলম্বী হওয়ার গুরুত্ব। ছোটখাটো চাকরির বদলে অভাবের সংসারেও কীভাবে ব্যবসা করেও দিন বদলে দেওয়া যায়, গ্রামবাসীদের বোঝাতেন সেসব।
বন্ধন তখনও ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠেনি। এই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছেন অভিজিৎ আর এস্থার। বুঝিয়েছেন স্বল্প ঋণ নিয়ে ঠিকঠাক শোধে কোনও সমস্যাই নেই, বরং সংসারটাই হয়তো পালটে যেতে পারে। বাস্তবে কিন্তু গেছেও। মোল্লাপাড়ায় অর্ডারি পোশাক সেলাইয়ের কাজ করা রেহানাই যেমন সেলাই মেশিন দিয়ে আজ পরিবারের পরিস্থিতিই পালটে দিয়েছেন। বিকলাঙ্গ স্বামীর চিকিৎসাও করছেন নির্বিঘ্নে। তবে রেহানা একা নন, মোল্লাপাড়ার প্রায় প্রতিটি মহিলা ‘বড় বাবু’ অভিজিতকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। সকলেই একসুরে বলছেন, ‘এমন মাটির মানুষ আর কটা হয়। আমাদের জন্যে অনেক করেছেন। ওঁর কথা শুনেছি, সেইমতো চলেছি। আজ তাই সুদিন দেখতে পারছি।’