মাসখানেক আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে কেন্দ্র করে হওয়া গণ্ডগোলের জেরে গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছিল এবিভিপি। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর শত অনুরোধের পরেও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় যেভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা ঘটনায় নিজেকে ‘জড়িয়েছিলেন’ এবং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছিলেন— তাকে মোটেই ভাল চোখে দেখেনি নবান্ন। তারপর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে নৃশংস খুনের ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করায় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছিল তাঁর। তবে এবার আর ধনকড়কে নতুন করে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। কয়েকদিন ধরেই তিনি নানা বিষয়ে সরকার সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করছেন, তা তৃণমূল আর মেনে নেবে না বলেই ঠিক করেছে।
মঙ্গলবার রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যপালের সব কথার উত্তর দেব না। এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সংবিধান-প্রধান হিসেবে ওঁর যা করা কর্তব্য, তা পালন করলেই খুশি হব।’ গতকাল রাজ্যপাল অভিযোগ করেছেন যে, পুজোর কার্নিভালে তাঁকে ডেকে অপমান করা হয়েছে। তিনি চার ঘণ্টারও বেশি কার্নিভালে ছিলেন। কিন্তু টেলিভিশনে তাঁকে বেশি দেখানোই হয়নি। কারও নাম না করলেও বাংলায় ‘জরুরি অবস্থা’র মতো পরিস্থিতি চলছে বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি। যদিও কার্নিভাল দেখে রাজ্যপাল যথেষ্ট প্রশংসাই করেছিলেন। কোনও অভিযোগই তোলেননি সেদিন।
রাজ্যপাল ও বঙ্গ বিজেপি নেতাদের একযোগে বিঁধে পার্থ বলেন, ‘বিজেপি নেতারা দিল্লীতে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, আপনি বাংলার রাজ্যপালের কাছ থেকে আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে রিপোর্ট নিন। রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা এও বলেছেন, বাংলায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শুরু থেকেই রাজ্যপাল এই ঘটনা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছেন। আর বিজেপি নেতারা দিল্লীতে গিয়ে চিৎকার করছেন। আমাদের কাছে এসব ঘটনার কোনও গুরুত্ব নেই।’ এরপরেই তাঁর সংযোজন, ‘বাংলার মানুষ সব দেখছে। মমতার ওপর এঁরা আস্থাশীল।’ তিনি এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, নাগরিকপঞ্জী নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে, ‘যাঁরা আত্মহত্যা করছেন তাঁদের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে বিজেপি নেতারা দিয়েছেন কি?’
এছাড়া গতকাল রাতে এক লিখিত বিবৃতিও দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব। তাতে তিনি জানিয়েছেন, ‘জিয়াগঞ্জের খুনের ঘটনা নিয়ে আরএসএস, বিজেপি পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছে। কোনটা আসল ওরা নিজেরা ঠিক করে নিক। প্রশাসন ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মূল দোষীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এখন আর বিজেপি নেতাদের মুখ দেখাবার উপায় নেই।’