তাঁর প্রথম ইনিংসে দেশবাসীকে দেখানো হাজারও স্বপ্নের মধ্যে অন্যতম ছিল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল, বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাকে ভারতে তাদের পণ্য উৎপাদন করতে উৎসাহিত করার একটি প্রয়াস। কিন্তু আদতে দেখা গেছে, সেই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ও শেষমেষ হয়ে গেছে ‘মেড ইন চায়না’ই। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন শুক্রবার মমল্লপুরমে চীনা প্রেসিডেন্ট জি শিনপিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন, ততক্ষণে দীপাবলির বাজার ভরে যেতে শুরু করেছে চিনা এলইডি বালবে। এ দেশের ঘরে কিংবা ছোট কারখানায় তৈরি প্রদীপ, টুনি বালবের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে। মোদী যখন শিনপিংকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন প্রাচীন মন্দির, তখন পড়শি মুলুকের পণ্যের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পেরে নাভিশ্বাস দশা কুটির, ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্পের। অনেক ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বড় শিল্পও।
প্রসঙ্গত, পণ্যের দাম ভারতের তুলনায় গড়ে ১০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ কম। ফলে পরিস্থিতি এতটাই কঠিন যে, ধূপকাঠি, সূচ, খেলনা, টুনি বালব, বিভিন্ন বৈদ্যুতিন পণ্য, ছুরি-কাঁচি, রেশম থেকে শুরু করে থার্মোমিটার, ঘর সাজানোর সামগ্রী— অনেক কিছু তৈরিই বন্ধ হওয়ার জোগাড় এই দেশে। আর সেই ২০১৮ সালেই নরেশ গুজরালের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে ভারতে চীনা পণ্যের আমদানি বেড়েছে ৫,০০০ কোটি ডলার। সেখানে ওই দেশে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার। মাঝের সময়ে চীনা পণ্যের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে কার্যত ঝাঁপ বন্ধের জোগাড় হয়েছে খেলনা, বাজি-সহ বিভিন্ন শিল্পের। তাই চীনের সঙ্গে সীমান্ত-ঝগড়া মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যে কিছুটা অন্তত ভারসাম্য আনাও আগামী দিনে মোদীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
কুটির ও ছোট শিল্পের সংগঠন ফ্যাকসি-র প্রেসিডেন্ট এইচ কে গুহর কথায়, ‘চীন পণ্য তৈরি করে বিপুল পরিমাণে। তাতে গড় খরচ কম। গুণমানও খারাপ। এই অবস্থায় কেন্দ্র যদি খারাপ গুণমানের পণ্য আমদানি না আটকায় আর সেই সঙ্গে কুটির এবং ক্ষুদ্র শিল্পের তৈরি করা বেশ কিছু পণ্যের আমদানি বন্ধ না করে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ওই সমস্ত পণ্য তৈরিই বন্ধ হয়ে যাবে ভারতে।’ বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, গত কয়েক বছরে কী ভাবে এ দেশের বাজি বাজারের দখল নিয়েছে চিন। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কী ভাবে ভারতের খেলনা বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ চলে গিয়েছে পড়শি মুলুকের দখলে। দোকানিরা বলছেন, ‘অনেক ক্রেতাই জানেন, চীনা বাজিতে ক্ষতিকর পদার্থ বেশি। গুণমান ভাল নয় তাদের খেলনার প্লাস্টিকের। কিনে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেই না জ্বলতে পারে দীপাবলির লাইটের অর্ধেক। তবু ভারতীয় পণ্যের সঙ্গে দামের ফারাক এতটাই যে, সেই চীনা পণ্যই খোঁজেন তাঁরা। তাই রাখতে হয় আমাদেরও। নইলে পাশের দোকান রাখলে, সকলে ছুটবেন সেখানে।’