কি বলবেন এই ম্যাচটাকে? জোগো বোনিতোর হার? সুন্দর ছন্দময় ফুটবলের মৃত্যু? ব্রাজিলীয় সাম্বা ছন্দের পতন?
যা-ই বলুন না কেন, এটা মানতেই হবে, এ যুগে ব্রাজিলের সেই ‘সাম্বা ছন্দ’ বা ‘জোগো বোনিতো’ অতীতের ‘সুখস্মৃতি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। নিয়ত পরিবর্তনশীল ফুটবলে এখন ‘ছন্দময়’ ফুটবলের ধারণাটাই মৃতপ্রায়—গত কয়েক বিশ্বকাপে ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড প্রভৃতি ইউরোপীয় দলের কাছে হেরে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বারবার এটাই প্রমাণ করছে যেন। আর কাল ব্রাজিলকে হারিয়ে বেলজিয়াম সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল। বেলজিয়ামের উদ্ভাবনী ও প্রেসিং ফুটবলের কাছেই কাল আবার অসহায় হয়ে পড়ল ব্রাজিল।
বেলজিয়ামকে কোনো প্রত্যুত্তর দিতে পারেনি নেইমার-কুতিনহোরা। পুরো ম্যাচেই নেইমারকে বাক্সবন্দী করে রেখেছিলেন ফেলাইনি, অল্ডারভেইরেল্ড-কম্পানি-ভারটংঘেনের ডিফেন্স ওদিকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল কুতিনহোকে। আর হলুদ কার্ডের খাঁড়ায় পড়া কাসেমিরো না খেলাতে যেন এই ব্রাজিলের গোলমুখ আরও উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। কাসেমিরোর মতো রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার যে একটা দলে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ব্রাজিল। হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনা-লুকাকুদের দ্রুতগতির কাউন্টারের সঙ্গে পেরে উঠছিল না কাসেমিরোর পরিবর্তে দলে আসা ফার্নান্দিনহোর বয়সী শরীর। ফলাফল? এই ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতী গোলেই পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল।
খেই হারানো ফার্নান্দিনহো এই ম্যাচে একটা হলুদ কার্ডও দেখেছেন। এবার আসা যাক জেসুসের প্রসঙ্গে। তরুণ এই স্ট্রাইকারকে ভাবা হচ্ছিল ব্রাজিলের পরবর্তী রোনালদো-রোমারিও; অন্তত জার্সির নাম্বারের দিক দিয়ে তো বটেই। এই জার্সির ভারেই যেন পুরো টুর্নামেন্টের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কালও জঘন্য খেললেন তিনি। আদর্শ ‘নাম্বার নাইন’ তিনি, তাঁর উচিত ছিল ডি–বক্সে পাকা শিকারির মতো ওত পেতে থাকা, বেলজিয়াম ডিফেন্সকে তটস্থ রাখা। সেই ম্যাচে জেসুসকে খুঁজেই পাওয়া গেল। নষ্ট করেছেন সহজ একটি গোলের সুযোগ।
ডি ব্রুইনা-হ্যাজার্ড ও লুকাকুর প্রতি আক্রমণগুলো সঠিক ছকে খেললে কেমন বিধ্বংসী হতে পারে, তা কাল দেখিয়েছে বেলজিয়াম। অন্যান্য ম্যাচের তুলনায় কাল একটু সামনে খেলেছেন ডি ব্রুইনা, আর তাঁকে জায়গা করে দিতে গিয়ে একটু ডানে চলে গিয়েছিলেন লুকাকু। এই টোটকাতেই কুপোকাত হয়েছে ব্রাজিলের ডিফেন্স, দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার, মাঠে লুকাকু আর ডি ব্রুইনার আসল অবস্থান বুঝতে পারেননি।
বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার এটিই সময়। গত কয়েক বছরে বেলজিয়াম বিশ্ব ফুটবলকে যেসব প্রতিভা দিয়েছে, একটা বিশ্বকাপ হয়তো তাদের পাওনাই আছে। আর সে পাওনাটাই এবার কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিতে এসেছে বেলজিয়াম। ব্রাজিল কাল বুঝেছে সেটি। বুঝেছে গোটা বিশ্বও।