শতবর্ষে ট্রফি নয়, বরং একরাশ লজ্জাই জুটলো ইস্টবেঙ্গলের কপালে। যেখানে ক্লাব ও কোম্পানি একসাথে মিলে নিজেদের ক্লাবকে দেশের শ্রেষ্ঠ প্রমাণের চেষ্টা করার কথা, সেখানে দুই গোষ্ঠীর চরম অন্তর্দ্বন্দ্বে শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গলের গায়ে লাগল কলঙ্কের ছোঁয়া। মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ স্রেফ কোয়েস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোচ আলেহান্দ্রোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় নিতে হবে সাবেক ইস্টবেঙ্গল কর্তাদেরও। কাস্টমসের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে তাঁরা বারবার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, ভুগেছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই বাড়ি ফেরার টিকিট কাটেন কোচ আলেহান্দ্রো। তড়িঘড়ি ফুটবলারদের দেওয়া হয় ছুটি। এই সিদ্ধান্ত ইনভেস্টরের। এর বিরোধিতা না করে এতদিন ধরে ক্লাবে ঘুঘুর বাসা বেঁধে থাকা সাবেক কর্তারাও তা মেনে নেন!
গত রবিবার মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে পড়ায় পরিত্যক্ত হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল-কাস্টমস ম্যাচ। লাল হলুদ কর্তারা সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লে’র দিন জানতে চেয়ে আইএফএ’কে চিঠি পাঠান। কিন্তু তার উত্তর আসে মঙ্গলবার রাত ন’টা নাগাদ। ইস্টবেঙ্গলের অভিযোগ, কেন এত দেরি করল আইএফএ? বাংলার ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা তখন পাল্টা জানায়, ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রচলিত রীতি মেনে রিপ্লে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কল্যাণীতে ম্যাচ আয়োজনের জন্য পুলিশি অনুমতি পেতেও সময় লেগেছে। যদিও আইএফএর কথার কোনো তোয়াক্কাই করেনি কর্মকর্তারা। ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার চিঠি দিয়ে আইএফএ’কে জানিয়ে দেন, দল কল্যাণী খেলতে যাচ্ছে না।
এরপর হঠাৎই বুধবার মধ্যরাতে হল আরেকপ্রস্ত নাটক। ইস্টবেঙ্গলের এক শীর্ষ কর্তা নিউটাউনে থাকা সাত ফুটবলারের সঙ্গে অ্যাকাডেমির তিন ফুটবলারকে কল্যাণী পাঠিয়ে ম্যাচটি খেলার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালান। বৃহস্পতিবার সকালে কল্যাণীতে দল নিয়ে রওনা হওয়ার জন্য বুধবার গভীর রাতে বাস্তব রায় ও অভ্র মণ্ডলকে মেসেজ করা হয়। কিন্তু এদিন সকালেই কলকাতা ছাড়েন হেড কোচ আলেহান্দ্রো। তাঁর রোষানলে পড়ার ভয়ে অভ্ররা দল নিয়ে কল্যাণী যেতে চাননি। এমনকি তিন জুনিয়র ফুটবলার চুক্তি বাতিলের ভয়ে খেলার ঝুঁকিও নেননি।
ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তা বলছেন, ‘বেশ কিছু প্রাক্তন ফুটবলার আর সমর্থকদের একটি বড় অংশের কথা ভেবেই আমরা শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেছিলাম খেলার জন্য।’ দেখা যাচ্ছে, সেই চেষ্টাতেই কোয়েস ও ইস্টবেঙ্গলের সম্পর্কের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ল। যার ফলে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল ক্লাবের ইমেজ। গত এপ্রিলে এই দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় সুপার কাপ বয়কট করে মোটা জরিমানার সামনে পড়েছিল লাল হলুদ। বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে কল্যাণীতে ইস্ট বেঙ্গল ওয়াকওভার দিল কাস্টমসকে। এদিকে, সমর্থকরাও এই ইস্যুতে একাধিক ভাগে বিভক্ত। সোশাল মিডিয়ায় কোয়েস এবং সাবেক কর্তা পন্থী অনুরাগীরা এই প্রসঙ্গে একে অপরকে দুষছেন। কখনও কখনও যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে শালীনতার মাত্রাও। ক্লাব নয়, এখন তাঁরা ব্যস্ত একে অপরের গোষ্ঠীকে দোষারোপ করতে।