এনআরসি করতে প্রয়োজনে নাগরিকত্ব বিল আনা হবে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানো হবেই। মঙ্গলবার বাংলায় দাঁড়িয়ে এই ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার তাঁর এ হেন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র। অমিত শাহ কলকাতায় এনআরসি নিয়ে যা বলেছেন, তার জবাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। আতঙ্ক ছাড়াচ্ছেন। বাংলায় আতঙ্ক না ছড়িয়ে পুজো দেখুন।’
অমিত মিত্রের কথায়, ‘এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেভাবে কয়েকটি ধর্মের কথা বলেছেন, ধর্মের নামে যেভাবে বিভাজন করার চেষ্টা করেছেন, ভারতের সংবিধান কি তা অনুমোদন করে? ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করার অনুমতি কি সংবিধান দিয়েছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই বক্তব্য কেউ আশা করেনি। মানুষের মনে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ায় বাংলার মানুষ ক্ষমা করবে না। হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিস্টানদের কিচ্ছু হবে না, বলে যেভাবে একটি বিশেষ ধর্মকে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে, তা কি ভারতীয় সংবিধান বিরোধী হচ্ছে না?’
তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এনআরসির আতঙ্কে ১৭ জন বাংলার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। বাংলার অলিতে-গলিতে আতঙ্ক। আসামে সম্প্রতি ১৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ লক্ষ হিন্দু। আবার তাঁদের মধ্যে ১২ লক্ষ বাঙালি। এমনকী তিনি নিজে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও, তাঁর যে জন্মের শংসাপত্র নেই সে কথাও জানান অমিত। জানান, তাঁর বাবা যশোরের মানুষ। তাহলে তো তাঁকেও চলে যেতে হবে। অমিতের কটাক্ষ, ‘আসামে ১৯ লক্ষ মানুষের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জেল তৈরি করা হচ্ছে। তাহলে ১ কোটি মানুষের জন্য এ রাজ্যটাকেই তো জেল করে ফেলতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এভাবে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় আতঙ্ক না ছড়িয়ে, পুজোর বাতাবরণে বাংলার কৃষ্টি দেখুন। পুজো দেখুন, আনন্দ করুন। প্রসাদ খান। পশ্চিমবঙ্গে সব ধর্মের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের আতঙ্কিত করবেন না। বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’ অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শাহকে বিঁধে বলেন, ‘তাঁর দলের লোকজন সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে ২ কোটি লোককে নাকি বাংলা থেকে সরানো হবে। সারা দেশে এনআরসি হবে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদে তাঁরা যদি সেই সিদ্ধান্ত বদল করেন, তাহলে রাজ্য ও দেশের মঙ্গল। আমরা কোনও অবস্থাতেই কোনও নাগরিককে ভারত বা বাংলার বাইরে পাঠানোর বিরুদ্ধে। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, থাকবে। ওঁর দলই তো সেকুলারিজমকে সম্মান করছে না।’