মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে ‘আর্থিক সংস্কারের’ নামে নামে এবার এমনই এক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র, যার ফলে কোপ পড়বে দেশের ৪২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওপর। অবশেষে বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে এই উৎসবের মরশুমেই এবার বিলগ্নিকরণের পথে বড় পদক্ষেপ নিল তারা। একসঙ্গে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়ার প্রস্তাব সোমবার অনুমোদন করল বিলগ্নিকরণ সংক্রান্ত সচিবদের গোষ্ঠী। এই তালিকায় আছে ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল), শিপিং কৰ্পোরেশন (এসসিআই), টিএইচডিসি ইন্ডিয়া এবং এনইইপিসিও। এই ৪ সংস্থায় সরকারের হাতে থাকা সমস্ত অংশিদারিত্ব বিক্রির পক্ষে মত দিয়েছে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন এই গোষ্ঠী। এছাড়া কন্টেনার কর্পোরেশনের ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিক্রির পক্ষেও সম্মতি দিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, বাজপেয়ীর জমানা থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্থ হয়। সচিব গোষ্ঠীর এই প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের ইতিহাসে এটি সবথেকে বড় বেসরকারিকরণের ঘটনা ঘটতে চলেছে। সংসদীয় আইন অনুসারে বিপিসিএল গঠিত হয়েছিল। ফলে এই সংস্থার শেয়ার বিক্রি করতে গেলে লোকসভা এবং রাজ্যসভার অনুমতি নিতে হবে সরকারকে। বর্তমানে বিপিসিএল-এ সরকারের ৫৩.২৯ শতাংশ অংশিদারিত্ব আছে। এছাড়া কন্টেনার কর্পোরেশনে ৫৪.৮ শতাংশ এবং শিপিং কর্পোরেশনে ৬৩.৭৫ শতাংশ অংশিদারিত্ব সরকারের। টিএইচডিসি কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের যৌথ অংশিদারিত্ব সংস্থা। এখানে কেন্দ্রের ৭৫ শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের ২৫ শতাংশ অংশিদারিত্ব আছে। নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন এনইইপিসিও সরকারের মালিকানাধীন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে আর্থিক ঘাটতির হার জিডিপির ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখার টার্গেট নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তীব্র মন্দার জেরে এমনিতেই প্রত্যাশা মতো কর আদায় হয়নি। এর মধ্যে কর্পোরেট কর হ্রাস করেছে কেন্দ্র। যার ফলশ্রুতিতে কেন্দ্র লক্ষ্য ভ্রষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা। আর্থিক ঘাটতি সামলাতেই তাই বিলগ্নিকরণ করে টাকা জোগাড়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদী সরকার। ভারত পেট্রোলিয়ামের অংশিদারিত্ব বিক্রির ফলে সরকারের ঘরে ৫৪,০৫৫ কোটি টাকা ঢুকতে পারে। আর কন্টেনার কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে তা দাঁড়াতে পারে ১১,০৫১ কোটি টাকা। আবার, শিপিং কর্পোরেশন থেকে ১,২৮২ কোটি টাকাও সরকারের ঘরে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ, বিপিসিএল এবং শিপিং কর্পোরেশনের বেসরকারিকরণ এবং কন্টেনার কর্পোরেশনের ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিক্রির মাধ্যমে মোট ৬৬,৩৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারে কেন্দ্র।