না সঞ্জু বাবা সন্ত্রাসবাদী নন। গো বধ ও করেন নি। তবে মুম্বাই পুলিশের তদানিন্তন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধদমন) এম.এন. সিংহ একটা কথা বারবার বলেন। ৯৩’ সিরিয়াল ব্লাস্টের খবর যারা করেছিলেন, তারা ও আপশোশ করেন।
১৬ জানুয়ারি ১৯৯৩ সঞ্জয় দত্ত যদি একবার ও ওর প্রভাবশালী সাংসদ-বাবা বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বলতেন যে বাড়িতে পিস্তল বা রাইফেল না অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় একে ৫৭ আর বিপুল কার্তুজ রাখা আছে যা সেসময় ভাবা ও যেত না কেউ ভারতে ব্যবহার করছে, তাহলে মুম্বাই সন্ত্রাসহানার ইতিহাসটাই অন্য হতে পারতো। হয়তো অনেকগুলো প্রাণ বাঁচতো। পাকিস্তান ও আর পরবর্তী ছকগুলো মুম্বাইকে কেন্দ্র করে কষতে দুবার ভাবতো।
সঞ্জয় দত্ত ৯৩’ মুম্বাই বিস্ফোরণে ব্যবহার হওয়া ৭১টি কালাশনিকভ, ৯০০টি কার্তুজ, ৫০০টি গ্রেনেড আর ৪টন আরডিএক্স থেকে ৩টি একে রাইফেল ও ২৫০টি কার্তুজ নিজের কাছে রেখেছিলেন। সন্ত্রাসবাদীদের বয়ান অনুসারে ‘নিরাপদ আস্তানায়’। সঞ্জু এই সব অস্ত্র নিজে হাতে নিয়েছিলেন আবু সালেমের থেকে। যে ভ্যানে করে সুনীল দত্তের বাড়িতে সেদিন অস্ত্র এসেছিল, সেই ভ্যানটিও মুম্বাই বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়।
আমি সেই সময়ের কথা বলছি যখন মুম্বাই পুলিশ স্টেন গান আর রাইফেলে আটকে। আমি সেই সময়ের কথা বলছি যখন আরডিএক্স কি ভারতে কেউ সেরকম জানে না। কিন্তু এটা জানে ওই বিপুল অস্ত্র যদি সবটা ব্যবহার হতো মুম্বাই এ, সমুদ্রপারে ধুলো বাদে আর কিছু অবশিষ্ট থাকতো না বানিজ্যনগরীর৷ আমরা ও কি জানি না? ১০টা কালাশনিকভ হাতে ২৬/১১ এর রাতে কি কি করা গেছিল?
কিন্তু সঞ্জু যে অবোধ বালক ছিলেন। সরল মন আর শিশুর মস্তিষ্ক। দুষ্টু বন্ধুর পাল্লায় পরে ড্রাগ নিয়েছেন, প্রেমে দাগা খেয়েছেন বলে আরো দুশো মেয়েকে শুইয়েছেন, বোর্ডিং স্কুলে যেতে হয়েছিল বলে বেহিসেবি-বাঁদর তৈরি হয়েছেন, মা বাবার চোখের মনি বলে উচ্ছন্নে যাওয়া লম্পট হয়েছেন। এর একটাও সঞ্জয় দত্ত নিজের দোষে হন নি। হয় বন্ধুদোষে বা ভাগ্যদোষে বা সঙ্গদোষে।
‘সঞ্জু’ ছবিটা নায়কের আত্মকথা নয়। ভারতের দুজন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের হাতে তৈরি এক খলনায়কের ইমেজ মেকওভারের কথা। দরকার হচ্ছে কেন? সঞ্জয় কি রাজনীতিতে আসছেন? নিসন্দেহে এক অসাধারণ সিনেমা, রনবীরের দারুণ অভিনয়, মন ছুঁয়ে যাওয়া কিছু দৃশ্য, থ্রি ইডিয়েটের মতো চটুল এক কমিক সিন কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন বারবার এটাই বলার চেষ্টা- সঞ্জয় দত্ত নিজের দোষে কিছু হন নি। খারাপ হয়েছেন হয় বন্ধুদোষে বা ভাগ্যদোষে বা সঙ্গদোষে। আর মিডিয়া এসব জেনে ও তাকে নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করেনি।
“ঘনিষ্ঠ মহল”, “ওয়াকিবহাল সূত্র”, “প্রশ্ন উঠছে”, “সূত্র মোতাবেক” দের নিয়ে অনেকের অনেক কৌতূহল। এরা কারা? এদের পেশা কি? কি করে এরা এতো খবর পায়? খবর জানে? খবর বলে? সিনেমায় রাজু হিরানির চিত্রনাট্য বলে বেশ করে কটাক্ষ করা হয়েছে এ নিয়ে। হওয়ারই কথা। যেভাবে নিজের এজেন্ডা এই শব্দগুলোর মোড়কে অনেকে ছাপিয়ে দেন তাতে আজ না হয় কাল এ নিয়ে কথা উঠতোই৷ কিন্তু সঞ্জু বাবা কেন যেন একটু বেশি Cry Baby এখানে।
সঞ্জয় দত্ত টাডাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে নিম্ন আদালত তাকে খালাশ করে দেয়। ভালো কথা। কিন্তু সিবিআই কোন কারনে আর উচ্চ আদালতে আপিল করে না, মিডিয়া ও সেসময় এই নিয়ে লাফালাফি করে না। সঞ্জয় দত্ত বাদে অন্য কোন সন্ত্রাস হানায় পরোক্ষ অভিযুক্তকে দেখেছেন এতটা দয়াশীলতা পেতে?
সুনীল দত্ত ছেলের স্নেহে অন্ধ ছিলেন। ওর মুক্তির জন্য ক্ষমতার সমস্ত দরজা খটখটিয়েছিলেন। তা সে নরসিংহ রাও হোক, বাজপেয়ী হোক বা বালাসাহেব ঠাকরে। গোটা বলিউড পাশে দাঁড়িয়ে ছিল৷ প্ল্যাকার্ড হাতে সলমান খানকে দেখা গেছিল। উই আর উইথ সঞ্জু। এতগুলো প্যারোল কি ভাবে পায় লোকে? কিভাবে সাজা মুকুব হয়? সাধারণ আসামির মতোই প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ তবু সঞ্জু বাবার রাগ।
ছবিতে সঞ্জু বাবা কিভাবে মাধুরীর গলায় সাপ ঝুলিয়ে তাকে প্রপোজ করেছিলেন আর ভয়ে কাঠ মাধুরী ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন, তা নেই। সেরকমই সঞ্জু বাবা বলিউডের পরের প্রজন্মকে কিভাবে কোকেন বা স্টেরোয়েডের সাথে আলাপ করিয়েছিলেন তা ও নেই। যেরকম আরো অনেক রসালো, মুচমুচে অধ্যায় নেই। রিচা নেই, আগের পক্ষের মেয়ে নেই, সঞ্জয় গুপ্তে নেই, সলমান নেই, রউফ লালা নেই। রাখা হয়নি অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে মাথায় রেখে। হু হু বাওয়া! ভারতে বসে কি আত্মকথা ফিল্মবন্দি করা এতো সহজ? একি হলিউড নাকি হে যে জীবনটা, তার কেচ্ছাগুলো, হতাশাটুকু পুরো স্ক্যান করে চিত্রনাট্যে লেপ্টে দেওয়া হবে?
সঞ্জু অবোধ বালক ছিলেন। সরল মন আর শিশুর মস্তিষ্ক। নিজের দোষে খলনায়ক হন নি। হয় বন্ধুদোষে বা ভাগ্যদোষে বা সঙ্গদোষে। এই নিয়ে যদি কথা হয় হোক না। কুছ তো লোগ কহেংগে ! ব্লাস্ট মে কুছ আদমি তো মরেংগে,দাঙ্গায় কুছ বাস তো জলেংগে! ছোড়ো বেকার ইন বাতো কো !
( মতামত ব্যক্তিগত )