বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাম আমলের তুলনায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে কৃষি ব্যবস্থার। তাঁর উদ্যোগেই একাধিক প্রকল্প পেয়েছেন বাংলার কৃষকেরা। এবার আরও এক কৃষকদরদী সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা সরকার। চাষে সেচ ব্যবস্থার আরও উন্নতি করতে গোটা রাজ্যে প্রায় ৮০০ ডিপ সাবমার্শিবল পাম্প বসাবে রাজ্য সরকার।
এই প্রকল্পে সরকারের খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। রাজ্যের আদিবাসী কল্যাণ দপ্তর থেকে এই ব্যাপারে প্রকল্প জমা দিতে প্রতিটি জেলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পাম্পের জন্য খরচ বাঁচাতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে। প্রথম পর্যায়ে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই পাম্প বসানো হবে। পরবর্তীকালে গোটা রাজ্যেই তা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই অধিকাংশ পাম্প বসানোর কাজ শেষ করে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তাই পুজোর পরই সব জেলাকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর জমা করতে বলা হয়েছে। ওই ডিপিআর পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। এর ফলে রাজ্যের আরও অন্তত কয়েক হাজার জমি মূলত বোরো চাষে সেচসেবিত হবে বলেই রাজ্য সরকারের কর্তারা মনে করছেন।
সরকারি অফিসাররা বলেছেন, এখনও পর্যন্ত যে পাম্পগুলি ব্যক্তিগত মালিকানায় বসানো আছে, সেগুলি বিদ্যুৎচালিত। কিন্তু, এই পাম্পগুলি সৌর বিদ্যুতে চালানো হবে। তাছাড়া রাজ্য সরকারই এগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ফলে খুব কম খরচেই চাষি সেচের জল পাবেন। তবে জলের জন্য কত টাকা চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে ন্যূনতম খরচেই এই জল চাষিরা পাবেন বলেই আদিবাসী কল্যাণমন্ত্রী দাবি করেছেন।
রাজ্য সরকারের কর্তাদের দাবি, বোরো চাষে যে পরিমাণ জল প্রয়োজন হয়, তা অনেকেই সাবমার্শিবল পাম্প দিয়ে তুলে চাষ করেন। কিন্তু, বহু প্রান্তিক চাষির পক্ষে এই পাম্প বসানো সম্ভব হয় না। আর বোরো চাষে জলেরও কিছুটা বেশি প্রয়োজন হয়। কারণ, তখন বৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সেচের অভাবেই বহু জমিতে চাষ করা যায় না। তাই ওই জায়গাগুলিতে সরকার এই পাম্প বসিয়ে দিলে ওই জমিগুলিও সেচসেবিত হয়ে যাবে। তার ফলে রাজ্যে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
রাজ্যের আদিবাসী কল্যাণমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বোরো চাষে অনেক জায়গায় জলের অভাবে চাষ করা যায় না। সেই সময় নদীতে জলস্তর কম থাকায় আরএলআইগুলি ব্যবহার করা যায় না। আবার অনেকের পক্ষে ডিপ সাবমার্শিবল পাম্প বসানো সম্ভব হয় না। তাই রাজ্য সরকারই এই পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা প্রথম ধাপে প্রায় ৮০০ এই রকম পাম্প বসাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ একর জমির মালিকদের নিয়ে একটি ক্লাস্টার তৈরি করব। তারপর সেখানেই ওই পাম্প বসিয়ে ওই জমিতে সেচের জল দেব। এই রকম অনেকগুলি ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে ডিপিআর জমা দিতে বলা হয়েছে।সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, নদীয়া, হাওড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি জেলাগুলিতে এই পাম্প বসানো হবে। মূলত এই জেলাগুলিতেই বোরো চাষে জলের অভাব হয় বলে রাজ্য সরকার মনে করছে।