দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসখানেক আগেই আসামে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যাতে বাদ গেছে, ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। একসঙ্গে এত মানুষকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ হতে দেখে আতঙ্ক বাড়ছে এ রাজ্যেও। এরই সঙ্গে অনুঘটকের মতো কাজ করছে বিজেপি নেতাদের ক্রমাগত হুঁশিয়ারি, যে বাংলাতেও এনআরসি হবে। ফলে যথাযথ নথি না থাকলেই নাগরিকত্ব হারানোর ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই এনআরসি-আতঙ্কে এ রাজ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন ৬ জন।
পরিস্থিতি এমনই যে এনআরসি-র আতঙ্ক সামাল দিতে গিয়ে কলকাতা পুরসভার জন্ম শংসাপত্র বিভাগের কর্মীদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ দিনে ১০০ জনের জন্ম শংসাপত্র (বার্থ সার্টিফিকেট)-এর আবেদনপত্র গ্রহণ করে। সূত্রের খবর, পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে দিনে ২৫০টি আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও জন্ম শংসাপত্র বিভাগের কার্যালয়ের সামনে ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পুর আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, এনআরসির অনেক প্রামাণ্য নথির একটি হচ্ছে জন্ম শংসাপত্র। তাই দিন কয়েক ধরে পুরসভায় দীর্ঘ লাইন পড়ছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানান, দিনে অন্তত সাড়ে সাতশো থেকে আটশো লোক বার্থ সার্টিফিকেট নিতে আসছেন। যত দিন যাচ্ছে, ততই ভিড় বাড়ছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ভিড় সামাল দিতে গিয়ে আবেদনপত্র গ্রহণের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। কারণ আতঙ্কিত মানুষদের অধিকাংশই জানেন না, পুরসভা থেকে বার্থ সার্টিফিকেট নিতে গেলে কী করতে হয়। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, পুরসভার জন্ম শংসাপত্র বিভাগে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট চাইলেই দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কর্মীরা যখন ফর্ম জমা করে পরে আসতে বলেছেন, তখনই ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
তবে কাজ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বাণীতে। তিনি আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বাংলার বুকে কোনও এনআরসি হবে না।’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলছেন, ‘বাংলাতে কেউ এনআরসি করাতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আগেই জানিয়েছিলেন বাংলাতে এনআরসি হবে না। এখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার চলছে। শুনতে পাচ্ছি বাইরে থেকে কিছু বর্গী, টর্গী এসে এনআরসি নিয়ে রাজনীতি করতে নেমেছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না।’ ফিরহাদ যে এখানে নাম না করে বিজেপি নেতাদেরই বিঁধেছেন তা বলাই বাহুল্য। ঠিক একইভাবে পুরসভার লাইনে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যে পরিমাণ ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন হয়রান হওয়া নাগরিকরা, তা চোখে পড়ার মতো।