এক সময় উল্টোডাঙার বুকে হত উল্টোডাঙা সর্বজনীনের দুর্গাপুজো। কিন্তু ১৯৬৩ সালে হঠাতই বন্ধ হয়ে যায় তা। পরের বছরও পুজো হয়নি। এরপর ১৯৬৫ সালে আবারও ‘পুনর্জন্ম’ হয় পুজোটির। নতুন নাম হয় তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীন। প্রথম দিকে তথাকথিত স্বনামধন্য পুজোর তালিকায় না থাকলেও নব্বইয়ের দশকে এশিয়ান পেন্টস শারদ সম্মানে ভূষিত হওয়ার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘পুনর্জন্ম’ হওয়া তেলেঙ্গাবাগানকে। দেখতে দেখতে ৫৪ বছরে পা দেওয়া এই পুজোর এ বছরের থিমও ‘পুনর্জন্ম’ই।
পুনর্জন্ম বলে সত্যিই কিছু আছে কিনা, তা নিয়ে চলতে পারে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক। তবে হিন্দু ধর্মের স্বীকৃত সত্য হল এই পুনর্জন্ম ও জন্মান্তরবাদ। বলা হয়, কোনও মানুষ কাম, ক্রোধ, অহংকার, মোহের মতো নানা আসক্তি থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তার পুনর্জন্ম হতে থাকে। এক কথায় ষড়রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত না হলে জন্ম নেওয়া শেষ হয় না। সেই মুক্তিলাভের এক মাত্র পথ এই সব থেকে দূরে থাকা। শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের শিল্পভাবনায় এবার এই বার্তাই দেবে তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীনের থিম। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে দশমহাবিদ্যার নানা রূপ। নজর কাড়বে, বিশাল আকারের অসুর আর অশুভ শক্তির মধ্যেই দুর্গার অবস্থান। দেখা যাবে, দেবীর চারপাশেই চড়কিপাক খাচ্ছে ষড়রিপু।
তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীনের সহ-সম্পাদক বাপি কাপুরিয়া এখন খবরকে জানান, “এ বছর আমাদের পুজো ৫৪ তম বর্ষে পদার্পণ করল। আমাদের মূল ভাবনা ‘পুনর্জন্ম’। এই পুনর্জন্ম যে কোনও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। প্রতিনিয়তই আমাদের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লালসার মতো ষড়রিপুর আধিক্য বেড়ে চলেছে। এর থেকেই মানুষকে আমতা মুক্তি দিতে চাইছি, পুনর্জন্ম দিতে চাইছি। নিজের এই চিন্তাভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েই তেলেঙ্গাবাগানের এই বিশালাকৃতির মন্ডপ সাজিয়ে তুলছেন শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল। তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন আরও দুই শিল্পী, মলয় দাস এবং অমিত রায়। প্রতিমাও গড়ছেন শিল্পী নিজেই।”
জানা গেছে, ফাইবার গ্লাস দিয়ে গড়া প্রতিমার চারদিক ঘিরে থাকবেন বিভিন্ন দেবতা ও কাম ক্রোধ ইত্যাদি রিপুর মডেল। দেবীর দশ হাতে কোনও অস্ত্র থাকবে না। থাকবে কিরণ। সেই কিরণের ছটা থাকবে মণ্ডপের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত। দেবীর ত্রিনয়নের কিরণ দেখা যাবে প্রবেশদ্বার থেকেই। উদ্যোক্তাদের দাবি, এখানে এসে কোনও দর্শনার্থীই নিরাশ হবে না।
যতটা আশা নিয়ে মন্ডপ ও প্রতিমা দর্শনে আসবেন তাঁরা, তার চেয়ে বেশিই পাবেন। এমনিতেও তেলেঙ্গাবাগানের পুজো নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে আলাদাই উন্মাদনা থাকে। রাস্তার পাশে ছোট গলির ভিতর পুজোমন্ডপ অবস্থিত হলেও, ভিড় উপচে পড়ে তাতে। এবারও যে তার অন্যথা হবে না, সে কথা জোর দিয়েই বলা যায়।