মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। যার ফলে উৎসবের লম্বা মরশুম হলেও বাজারে বিক্রিবাটা তেমন বাড়বে বলে মনে করছে না শিল্প মহল। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি। আর বিক্রি না বাড়ার আশঙ্কা থেকেই এই ভরপুর ব্যবসার মরশুমেও তেমন ভাবে জিনিসপত্র মজুত করছে না তারা। বহু সংস্থার কর্তারা একবাক্যে বলছেন, পণ্য-সামগ্রীর দাম কমলে না হয় চাহিদাকে কিছুটা ঠেলে তোলা যেত। আশা করা যেত বিক্রি বাড়ানোর। কিন্তু শিল্প মহল মনে করছে, সরকার তড়িঘড়ি কর্পোরেট করের বোঝা কমালেও, এখনই জিনিসপত্রের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, উৎসবের মরসুমে এই তিন মাসে বাজারে কেনাকাটা বেশি হয়। বিক্রি বাড়াতে সংস্থাগুলিও দামে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে ক্রেতাদের। নতুন পণ্য আনে বাজারে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে ভোগ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর বিক্রি পড়তির দিকে। কারণ চাহিদায় ভাটার টান। উল্লেখ্য, দেওয়ালিতে টিভি, রেফ্রিজারেটর, এসি, ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি সব থেকে বেশি হয়। কারণ সংসারের জিনিসপত্র কেনার জন্য সেটা ভাল সময় বলে মনে করেন অনেকে। সে কথা মাথায় রেখে ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলিও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি পণ্য মজুত করে। কিন্তু গত এক বছর ধরে বিক্রি ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি মাত্রায় কমেছে। এ বারের উৎসবের মরসুমে মজুত বাড়ানোর সেই ভুল আর করতে চাইছে ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যদিও কর্পোরেট করের হার কমিয়েছেন। তবে করের বোঝা কমে যাওয়ার সুবিধা পেয়ে শিল্প সংস্থাগুলি পণ্যের দাম কমিয়ে ফেলবে, এমন আশা অর্থমন্ত্রী নিজেও করছেন না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি সংস্থাকে দাম কমিয়ে আমজনতাকে সুরাহা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে না। কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘বেসরকারি সংস্থাগুলি কর্পোরেট কর কমার ১০০ শতাংশ সুবিধা নিজের কাছে রেখে না দিয়ে ক্রেতাকেও কিছুটা সুরাহা দেওয়া হবে বলে যুক্তি দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আদতে তা হবে না। পুরো ফায়দা সংস্থা নিজের কাছে রাখবে।’ তাঁদের দাবি, সংস্থাগুলি করের বোঝা কমে যাওয়ার সুবিধা অন্যত্র ব্যবহার করে। মূলত বাড়তি তহবিল লগ্নী-সহ ব্যবসা বাড়ানোর কাজে খরচ করে।
শিল্প মহলও এই দাবি মেনে নিচ্ছে। যেমন দিল্লীতে পাখা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সংগঠন আইএফএমএ-র চেয়ারম্যান অতুল জৈন বলেন, ‘কর্পোরেট কর খাতে সাশ্রয় হওয়া অর্থ আরও বেশি করে প্রযুক্তি, নতুন যন্ত্রাংশে লগ্নী করা হবে।’ শুধু তাই নয়। উল্টে বিক্রি বাড়ানোর জন্য দাম কমাতে আরও কর ছাড়ের দাবি করছে তারা। বলছে, পাখার মতো সব স্তরের মানুষের রোজকার ব্যবহারের পণ্যে জিএসটি-ও ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হোক। ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রকের কাছে তাঁরা এ বিষয়ে দরবার করেছেন বলে জানিয়েছেন অতুল।