কলকাতা লিগে চলছে ধুন্ধুমার লড়াই। ইতিমধ্যেই কাপ জেতার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে মোহনবাগান। মহমেডান শেষ পর্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রয়েছে লিগ শীর্ষে। ইস্টবেঙ্গল এখনও রয়েছে খেতাবের দৌড়ে। কিন্তু পিয়ারলেস বাকি দু’টি ম্যাচ জিতে গেলেই শেষ হয়ে যাবে দুই বড় ক্লাবের সব আশা। আর মোহনবাগান শেষ তিনে থাকা নিয়েই তো চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হল, লিগে ছোট দলের যে-সব ফুটবলার অমিত-বিক্রম নিয়ে বড় দলকে নাস্তানাবুদ করছেন, তিন মাসের কলকাতা লিগ শেষ হওয়ার পরে তাঁরা ‘ঠিকানাহীন’। ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের ফুটবলারদের আই লিগ খেলার সুযোগ থাকলেও ময়দানের ছোট দলগুলির সেই সুযোগ নেই। পিয়ারলেস লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলবে না। তা হলে বাকি মরসুম ছোট ক্লাবের ফুটবলারেরা কী করবেন? তাই লিগ চলাকালীনই দুশ্চিন্তার মেঘ ঘিরে ধরেছে লিগ মাতানো ফুটবলারদের।
গোটা লিগে এখনও পর্যন্ত তুমুল দাপট দেখিয়েছেন কামো-ক্রোমা। কামোর শটে কেঁপেছে ইস্টবেঙ্গলের জাল। কিছুদিন আগেই ক্রোমার গোল সংখ্যা ছিল ১১ এবং কামোর ৯। দুর্দান্ত খেলেছেন লক্ষ্মী মাণ্ডিও।ষাট বছর পরে তিন প্রধানের বাইরে ছোট ক্লাব হিসেবে লিগ জিতে চমকে দিলেও ওঁদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিজেরাই জানেন না।কারণ লিগ শেষ হলে শেষ হবে চুক্তির মেয়াদও।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে কিবু ভিকুনার লিগ জয়ের স্বপ্নে জোরালো ধাক্কা দিয়েছিলেন এরিয়ানের যে-দুই ফুটবলার, সেই ডিওমান্ডে গ্যাচ ও সন্দীপ ওরাওঁ অক্টোবর থেকেই বেকার হয়ে যাবেন। কারণ কলকাতা লিগ শেষ হলেই ক্লাবের সঙ্গে তাঁদের চুক্তিও শেষ।
দুর্দান্ত গোল করা গ্যাচের সঙ্গে এরিয়ানের চুক্তি ম্যাচ প্রতি কুড়ি হাজার টাকা। আইভরি কোস্টের ওই ফুটবলার জানালেন, ‘‘আই লিগের কোনও ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করব। তা না-হলে খেপ খেলব। ক্লাব থেকে আর কত পাই! ওখানেই তো টাকা।’’ আর তাঁর সতীর্থ সন্দীপ ওরাওঁয়ের মন্তব্য, ‘‘জানি না লিগ শেষ হলে কী করব। কোথায় খেলব। কোনও টুনার্মেন্ট তো সামনে নেই। পাড়ার টুর্নামেন্টে খেলব।’’ দুই প্রধানকে হারিয়ে এখনও লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রোমা। পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন টুনার্মেন্টে খেলে বেড়ানোয় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করে দলকে জেতানোর আগের রাতেই খড়গপুর থেকে ফিরেছিলেন খেপ খেলে। তাঁর কাছে এখনও কোনও ক্লাবে খেলার প্রস্তাব নেই। শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের মেসে রাত কাটানো লক্ষ্মী মান্ডি কী করবেন? পুরুলিয়ার ছেলে পিয়ারলেসের নির্ভরযোগ্য মিডিয়ো বলছিলেন, ‘‘শুধু কলকাতা লিগের জন্য চুক্তি আছে পিয়ারলেসের সঙ্গে। তারপরে চেষ্টা করব আই লিগের কোনও দলে ঢোকার। না-পেলে পাড়ায় পাড়ায় ম্যাচ খেলতে হবে।’’ ক্রোমার মতো একই অবস্থা ভবানীপুরের বিদেশি স্ট্রাইকার বাই কামোর। লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার ভবিষ্যৎও তো অনিশ্চিত। তাই সব মিলে বেশ ভালো রকম চিন্তায় লিগ মাতানো ফুটবলাররা।