ভারতীয় সঙ্গীত জগতে পণ্ডিত রবিশঙ্কর একজন প্রণম্য ব্যক্তিত্ব। ওঁর নাম শোনেননি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দুস্কর। একসময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পতাকা বিশ্বব্যাপী বহন করে বেরিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর এই কিংবদন্তী সেতার বাদক। সঙ্গীত রচনাকে প্রায় সাধনার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ভারতীয় কিংবদন্তীর মহামূল্যবান নথি ফিরছে পথে-ঘাটে। অবহেলায়। আর পাঁচটা সাধারণ কাগজের মতো বিকোচ্ছে কেজি দরে। যার মধ্যে রয়েছে প্রবাদপ্রতীম পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের লেখা এবং সই করা এক কবিতাও। যা তিনি অত্যন্ত স্নেহ করে উপহার দিয়েছিলেন রবিশঙ্করকে।
সম্প্রতি, মুম্বইয়ের মাহিম রেলস্টেশনের বাইরে এক পুরনো কাগজবিক্রেতার দোকানে মিলল ভারতরত্ন, কিংবদন্তি সেতারবাদক প্রয়াত রবিশঙ্করের সঙ্গীত জীবনের মহামূল্যবান নথি সম্বলিত একটি চামড়ার স্যুটকেস। পুরনো দিনের ওই স্যুটকেসে রয়েছে রবিশঙ্করের মিউজিক্যাল নোটস, হাতে লেখা চিঠি, অনেক পুরনো ছবি, নিজের সই করা বই ছাড়াও আরও নানান মূল্যবান নথি। এছাড়াও স্যুটকেসে পাওয়া গিয়েছে রবিশঙ্করের নিজের হাতে লেখা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া বহু বিখ্যাত রাগ, গীতিনাট্যধর্মী রাগের নোটস প্রভৃতিও।
আরও চমকপ্রদ বিষয় হল, ব্রিটেনের এক অনুষ্ঠান আয়োজকের বিরুদ্ধে রবিশঙ্কর এক অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর নিজের হাতে লেখা অভিযোগপত্রও ওই স্যুটকেসে রয়েছে। ২০১২ সালে রবিশঙ্কর প্রয়াত হন। গত বছর মুম্বইয়ের ব্রিচক্যান্ডি রোডের বাড়িতে প্রয়াত হন তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী অন্নপূর্ণাদেবীও। মুম্বইয়ের এক লেখক সম্প্রতি পুরনো হিন্দি সিনেমার পোস্টার খুঁজতে গিয়ে মাহিম রেলস্টেশনের বাইরে বসা বহু পুরনো একটি কাগজ বিক্রেতার কাছে স্যুটকেসটি পান।
কিন্তু এরপর কীভাবে খোয়া গেল সেসব নথিপত্র? আর কীভাবেই বা ওই কাগজ বিক্রেতার কাছে পৌঁছল ওস্তাদ রবিশংকরের সেসব মহামূল্যবান নথিপত্র? সেসব নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠছেই। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, স্ত্রী অন্নপূর্ণাদেবীর মৃত্যুর পর ব্রিচক্যান্ডি রোডের বাড়ি থেকে কেউ এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-সহ রবিশঙ্করের চামড়ার স্যুটকেসটি পুরনো কাগজ ক্রেতাদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন।