বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একতরফা ভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন? ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি কিন্তু সে কথা বলছে না। বাবুলও যে মেজাজ হারিয়েছেন সে ছবি ফ্রেমবন্দীও হয়েছে। কনুই উঁচিয়ে এক ছাত্রীকে আঘাত করতেও দেখা গেছে আসানসোলের এই সাংসদকে। তবে এখানেই শেষ তাই নয়। যাদবপুরে ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে পড়ে সেখানকার রক্ষী নীলিমেশ রায়ের ওপরেও ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাবুল। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং পড়ুয়াদের সামনে বাবুল ওই রক্ষীর মোবাইল কেড়ে নেন তিনি। এমনকী তাঁর চাকরি খেয়ে নিতে পারেন বলেও হুমকি দেন।
সেই ঘটনার একদিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবারও দেখা গেছে যে বাবুলের ক্ষোভ কমেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নীলিমেশের ছবি-সহ সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তিনি। ফেসবুকে লিখেছেন, ওই রক্ষীর বাবা সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। তাই তিনি যাদবপুরে চাকরি পেয়েছেন। বাবুল তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় অবমাননাকর মন্তব্য করছিলেন। বাবুলের দাবি, যখন উপাচার্যের সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন, তখন নীলিমেশ জানান, তিনি যাদবপুরেরই ছাত্র। তাই কর্তব্য ভুলে বাম ছাত্রদের বিক্ষোভের পক্ষে দাঁড়ানো তাঁর অধিকার। নীলিমেশ অবশ্য পুরো বিষয়টিই এ দিন অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, বাবুলের যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন।
কী ঘটেছিল সেদিন? বৃহস্পতিবার পড়ুয়াদের হাতে অবরুদ্ধ অবস্থায় বাবুলই প্রথম ওই রক্ষীকে দেখে বলতে থাকেন, ‘আপনি এখান থেকে চলে যান। আপনি আমার নিগ্রহে অংশ নিয়েছেন।’ তার পরেই নীলিমেশের পকেট থেকে মোবাইলটি তুলে নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নীলিমেশ বলতে থাকেন, ‘যাব না। এটা আমার ডিউটি।’ উত্তরে বাবুল বলেন, ‘ডু ইয়োর ডিউটি অর ব্যাক অফ।’ তারপরই উপাচার্য নীলিমেশকে চলে যেতে বলেন। এবং বাবুলকেও অনুরোধ করেন, তিনি যেন নীলিমেশের মোবাইল ফেরত দেন। পড়ুয়ারাও ফোনটি ফেরত দিতে বলেন।
তবে এখানেই শেষ নয়। ছাত্র-বিক্ষোভের মধ্যে বাবুলকে কে পি বসু মেমোরিয়াল হলে পৌঁছে দেন উপাচার্য। তার পরে নিজের দফতরে ফিরে যান। অনুষ্ঠান শেষে বেরোতে গিয়ে আবার বাধা পান বাবুল। সেই সময় ওই ভবনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাবুল, অগ্নিমিত্রা পাল আটকে থাকেন ভিতরে। বাবুলকে ঘিরে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী এবং নীলিমেশ-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য রক্ষীরা। বাবুল নীলিমেশকে বলেন, ‘আপনার ভিসি-কে ডেকে আনুন।’ নীলিমেশ জানান, তিনি তা পারেন না। যদি বাবুল উপাচার্যকে আসতে বলেন, তিনি তাঁকে নিয়ে আসতে পারেন।
এর পরে বাবুল উপাচার্যের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাঁকে ফোন করেন। উপাচার্য জানান যে, তিনি আসছেন। ফোন শেষ হলে নীলিমেশের দিকে তাকিয়ে ফের বাবুল বলেন, “আপনি এখন যা করলেন, সেই কারণেই আপনাকে আমি ‘স্যাক’ করার (চাকরি কেড়ে নেওয়ার) ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু করছি না।” তারপরেই সেখান থেকে চলে যান নীলিমেশ। তিনি জানিয়েছেন, বাবুল তাঁর বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাঁর দাবি, ‘এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করার প্রশ্নই ওঠে না। বরং উনিই বারবার বলছিলেন, আমার চাকরি কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।’ তবে শুধু নীলিমেশই নয়, স্বয়ং উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকেও নানা অসম্মানজনক কথা বলেছেন বাবুল।
সেদিন পরিস্থিতি অপ্রীতিকর হয়ে ওঠার খবর পেতেই হাজির হয়েছিলেন উপাচার্য। তিনি বাবুলকে তাঁর ঘরেও নিয়ে যেতে চান। কিন্তু আসানসোলের সংসদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি সেখানে যাবেন না। আর সভার পর যে ভাষায় বাবুল যাদবপুরের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন, তাতে বাবুলের ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশই ঘটেছে বলে মনে করে বুদ্ধিজীবী মহল। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে কথাবার্তায় যে সংযম, শিষ্ঠাচার থাকা উচিত ছিল, তার ছিটেফোঁটাও ছিল না তাঁর মধ্যে। তিনি যে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সে কথাই বারবার মনে করিয়ে দিয়ে উপাচার্যের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘আপনারই উচিত ছিল এখানে এসে আমাকে অভ্যর্থনা জানানো।’