‘লাইম লাইটে থাকার জন্য কলজেটাকে চড়াই পাখির কলজে বানাবেন না’ কিংবা ‘অনেকদিন ধরেই উনি পদ্মপন্থী’ – যাদবপুরে বাম ছাত্র সংগঠনের পাশে না দাঁড়িয়ে বাবুল কাণ্ডের যে ‘বাম বিরোধী’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএম নেতা তথা যাদবপুরের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী, তার প্রতিবাদে এবার এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বাম সমর্থকরা। একের পর এক পোস্টে বিঁধলেন সুজনকে।
প্রসঙ্গত, এবিভিপির নবীন বরণকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় যা যা ঘটনা ঘটেছে সেজনু বাম ছাত্র সংগঠনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএম নেতা সুজন। বাবুল সুপ্রিয় ও অগ্নিমিত্রা পালকে ঘিরে ছাত্র বিক্ষোভ ঘটনায় ছাত্রদের পাশে না থেকে বাবুলদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এমন আচরণ কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
তাঁর কথায়, ‘ছাত্ররা ওদের ঘিরে কালো পতাকা দেখাতে পারতেন। প্রতিবাদের একটা ধরন আছে। গায়ে হাত তোলাকে কোনওভাবেই সমর্থন করি না। এই ধরণের আচরণ কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘যাদবপুর দখল করতে দিলীপবাবুরা যখন গিয়েছিলেন, তখন ছাত্ররা তা প্রতিহত করেছিল। সেই স্পিরিট সমর্থনযোগ্য। কাউকে গায়ে হাত দিয়ে হেনস্থা করলে তাঁকেই সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়। এটা কখনই উচিত কাজ হয়নি।’
সংবাদ মাধ্যমের কাছে সুজনের এ হেন প্রতিক্রিয়ার পরই রাগে-লজ্জায় তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন যাদবপুরের পড়ুয়া থেকে শুরু করে বাম কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ। প্রকাশ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক তোপ দাগতে থাকেন তাঁরা। ধেয়ে আসে একের পর এক কটাক্ষ। একজন যেমন লিখেছেন, ‘বামপন্থার মৃত্যু হয় না! সুজনবাবু কি বামপন্থী? অনেকদিন ধরেই উনি পদ্মপন্থী।’
আরেক বাম সমর্থকেরও এই একই বক্তব্য। তিনি লিখেছেন, ‘সুজন চক্রবর্তী আপনি সত্যিই বামপন্থী তো? যাদবপুরে বামপন্থী ছাত্রদের আন্দোলনকে অস্বীকার করে এটা তৃণমূলের সংগঠিত বলে মন্তব্য করে পরোক্ষে বিজেপির দালালি করলেন। একজন বামপন্থী নেতৃত্ব হয়ে বাম ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে না দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েগুলোকে অপমান করলেন…ছিঃ ছিঃ…’ একইসঙ্গে তাঁর তোপ, ‘বাংলায় বাম তুলে দেবে কয়েকজন/ এরমধ্যে বিখ্যাত সূর্য, সেলিম, সুজন।’
তবে জনৈক কৌস্তভ নামক এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বোধহয় সুজনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বোমাটা ফাটিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘ডঃ সুজন চক্রবর্তী, প্রেস বিবৃতি দিচ্ছেন দিন। ভুলে যাবেন না, আপনার দলের ভবিষ্যৎ কিন্তু এরাই… শাসন করুন, এই কাজগুলো করবেন না, ভুলে যাবেন না, বিগত সময়ে এই তাজা যৌবন গুলোই আপনাদের রসদ জোগায়… নেতা হয়েছেন হোন, কিন্তু ছাত্র যুব দের চটিয়ে মিডিয়া পার্সন হয়ে জননেতা হওয়া যায় না।’
এরপরেই তাঁর কটাক্ষ, ‘যদিও আপনার সেই কলজে নেই, কারণ এই আকালেও ওই ছেলে মেয়ে গুলো স্বপ্ন দেখার সাহস রাখে, বুকের ভিতর আগুণ জ্বেলে দিন বদলের স্বপ্ন দেখে, ওদের কলজে টা বাজ পাখির, আপনাকে অনুরোধ হারিয়ে যাওয়ার আগে, লাইম লাইটে থাকার জন্য কলজে টাকে চড়াই পাখির কলজে বানাবেন না প্লিজ…ছাত্রদের আজকের পদক্ষেপ ঠিক ভুল পরে বিচার্য, ওদের সাহস কে, জেদ কে কুর্নিশ, আর আপনার পদক্ষেপ কে ধিক্কার…’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএফআইয়ের এলসিও যে বিবৃতি দিয়েছে তাতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘কেউ যদি মনে করেন যে আজকের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, তা হলে হয় তিনি পরোক্ষে বিজেপির হয়ে কথা বলছেন, নয়তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐক্যবদ্ধ বাম প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বিজেপি আরএসএস-এর রাজনৈতিক সংঘর্ষের তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম। বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার করতে আসতেই পারেন। এটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাবে, এটাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’
শুধু তা-ই নয়। এ ব্যাপারে যে তারা কট্টর অবস্থান নিয়েছে, তা-ও পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা। তাদের বক্তব্য, ‘বিক্ষোভ মেপে করা হলে, সেটা বিক্ষোভ নয়, নাটক হয়। আমরা নাটক করতে যাইনি, বিক্ষোভ দেখাতেই গেছিলাম।’ ফলে খোদ দলীয় কর্মী-সমর্থক ও বাম মনোভাবাপন্ন ছাত্রছাত্রীদের কাছে যে ‘লাইম লাইট প্রিয়’ সুজন এখন ‘কুজন’ হয়ে উঠেছেন তাঁদের এ হেন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেই তা স্পষ্ট।