গতকাল থেকেই স্বার্থের সংঘাত নিয়ে তোলপাড় হয়েছে দেশের ক্রিকেট মহল। একদিকে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্যদিকে বোর্ডের ওম্বুডসম্যান ও এথিক্স কমিটি। বোর্ডের ওম্বুডসম্যান ও এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। তবে তাতে এতটুকু আক্রান্ত নন সিএবি প্রেসিডেন্ট। বরং রাতে সৌরভ পরিষ্কার ঘোষণা করে দিলেন, তাঁর এখন একটাই পদ-সিএবি প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার হঠাৎই সৌরভের স্বার্থের সংঘাত নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের ওম্বুডসম্যান ও এথিক্স অফিসার ডি কে জৈনের রায় প্রকাশ্যে চলে আসে। গত আইপিএল চলাকালীন কলকাতার তিন ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ সৌরভের বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ তুলেছিল। বোর্ড ওম্বুডসম্যানকে তাঁরা লিখেছিলেন যে, সৌরভ একই সঙ্গে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস মেন্টর এবং সিএবি প্রেসিডেন্ট। যা পরিষ্কার স্বার্থের সংঘাত। পরের দিকে আবার জুড়ে দেওয়া হয়, ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিতেও আছেন সৌরভ। বোর্ড ওম্বুডসম্যান গত ১৬ জুন নিজের রায় বোর্ডকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার। দেখা যায়, রায়ে বোর্ড ওম্বুডসম্যান বলেছেন যে, স্বার্থের সংঘাত বিষয়ে তিনি সৌরভকে বেনিফিট অব ডাউট দিতে চান। তিনি মনে করেন, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক জেনেশুনে স্বার্থের সংঘাতে জড়াননি। কিন্তু সঙ্গে তিনি এটাও মনে করিয়ে দিতে চান যে, সৌরভ যে কোনও একটা পদে থাকতে পারবেন। হয় সিএবি প্রেসিডেন্ট নয় ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি সদস্য। কিংবা দিল্লী ক্যাপিটালস মেন্টর। তিনটে পদে একসঙ্গে থাকা যাবে না।
বোর্ড ওম্বুডসম্যানের রায়ের খবর ছড়িয়ে পড়তে স্থানীয় ক্রিকেটমহলে অমোঘ প্রশ্নটাও উঠে পড়েছিল যে, এরপর সিএবি নির্বাচনে কী হবে? সৌরভ প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ালে তো তাঁকে দিল্লী ক্যাপিটালস ছাড়তে হয় ওম্বুডসম্যানের রায় অনুযায়ী। কোনটা তা হলে বেছে নেবেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক? রাতের দিকে সৌরভ বললেন, “স্বার্থের সংঘাত কোথায় আমার? আমি বোর্ডের কোনও কমিটিতে নেই। ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি ছেড়ে দিয়েছি। টেকনিক্যাল কমিটি ছেড়ে দিয়েছি। দিল্লি ক্যাপিটালসের আইপিএল মরসুমও শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার এখন একটাই পদ। আমি এখন শুধুই সিএবি প্রেসিডেন্ট।”
পরে সৌরভ ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ বলছিলেন, সৌরভের সিএবি প্রেসিডেন্ট দাঁড়ানো নিয়ে কোনও দ্বিমত বা সংশয় নেই। বোর্ড ওম্বুডসম্যানের রায়ের পর তিন মাস কেটে গিয়েছে। তার মধ্যে স্বার্থের সংঘাত নিয়ে তিনটে বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। এবং সৌরভ নিজের অবস্থান সব সময় পরিষ্কার করেই রেখেছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে তাঁর বর্তমানে কোনও চুক্তিই নেই। আইপিএল তো আগামী বছর এপ্রিলে। এখন তা হলে কোথায় দিল্লির সঙ্গে জড়িয়ে? আর প্রভাব খাটানোর তো প্রশ্নই নেই। বলা হচ্ছে, যদি গত আইপিএলে কেকেআর বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচে সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে পিচে ঘাস ছেড়ে রাখতেন দিল্লি মেন্টর সৌরভ, তা হলে তাঁর টিমও প্রথমে ব্যাট করতে গেলে আক্রান্ত হতে পারত। সেই ঝুঁকি কেউ নেয়? আর দিল্লি ক্যাপিটালস থেকে যাঁরা যাঁরা এখন ভারতীয় টিমে খেলছেন, নিজেদের যোগ্যতায় খেলছেন। শিখর ধাওয়ান, ঋষভ পন্থ, ইশান্ত শর্মাদের পরিসংখ্যান তাঁদের হয়ে যুক্তি দিয়ে দেবে। সৌরভের আলাদা সুপারিশের কোনও প্রয়োজন পড়বে না। আর অনৈতিক ভাবে তিনি কিছু করেছেন, আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারবে? দুই শিবিরে সরগরম স্থানীয় ক্রিকেট মহল।