বহুদিন যাবৎ উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছিল আসাম জুড়ে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার প্রকাশিত হয়েছে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু। জন্মও এ দেশেই। এরই মধ্যে বাংলাতেও এনআরসি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক লড়াইয়ের পাশাপাশি আত্মরক্ষার বর্ম মজবুত করা – বাংলায় সম্ভাব্য এনআরসির বিরোধিতায় এই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে নমশূদ্র সংগঠন। আতঙ্কের প্রহরে ঘর গোছানোর পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালতের দিকেও নজর রাখছেন মতুয়া এবং নমশূদ্র সংগঠনের সদস্যরা।
একদিকে চলছে এনআরসি বিরোধী জোরদার আন্দোলনের প্রস্তুতি, অন্যদিকে যুদ্ধে নামার আগে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার পালাও চলছে জোরকদমে। এমনিতে ১৯৫১ সালের প্রথম নাগরিকপঞ্জীতে যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের বংশধরদের নাম তোলায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সেই পঞ্জীতে বাপ, দাদু, ঠাকুরদা, ঠাকুমার নাম ছিল কিনা, তা জানার সুযোগ আজকের নাগরিকদের বেশির ভাগেরই নেই। সেই নথি রয়েছে সরকারের কাছে। ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ১৯৪৮-এর ১৯ জুলাইয়ের আগে থেকেই যে তাঁদের পূর্বপুরুষরা এদেশে বাস করছেন, সেই নথি জোগাড়েই এখন অনেকটা সময় দিচ্ছেন অনেকে।
কারণ, ওই আইনে বলা হয়েছে, ওই সময়ের পরে আসা মানেই অনুপ্রবেশকারী। সারা ভারত নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের তরফে সম্ভাব্য এনআরসি-র বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের প্রস্তুতির সঙ্গেই তাই চলছে প্রয়োজনীয় নথি জোগাড়ের তোড়জোড়। নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মুকুল বৈরাগ্য বলেন, ‘এনআরসি-র বিরুদ্ধে শক্তিশালী লড়াই গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। সুপ্রিম কোর্টেও এ নিয়ে মামলা চলছে। তবুও আত্মরক্ষার্থে নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের কাজ এগিয়ে রাখতেও আমরা আবেদন জানাচ্ছি সংগঠনের বিভিন্ন সভা থেকে।’
সংগঠনের হিসেবে, আসামে এনআরসি-তে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১১ লাখেরও বেশি হিন্দু। এ রাজ্যে এনআরসি চালু হলে রাজ্যের ৪ কোটিরও বেশি মানুষ চরম বিপদে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন মতুয়া এবং নমশূদ্র সম্প্রদায়ের নেতারা। নমশূদ্র এক নেতার কথায়, ‘আমার বাবা বাড়ি কিনেছিলেন ১৯৫৪ সালে। তার আগের নথি আমি জোগাড় করবই বা কী ভাবে?’ এই সমস্যায় যে শুধুমাত্র ওপার বাংলা থেকে আসা পরিবারগুলিই পড়তে চলেছে, তা নয়। সমান বিপদে বংশ পরম্পরায় যাঁরা এপার বাংলাতেই বাস করে আসছেন, তাঁরাও।
কেউ খুঁজে চলেছেন দাদু বা ঠাকুরদার কেনা সম্পত্তির দলিল, জমির পরচা। কেউ বা আবার পূর্বপুরুষের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্রের প্রমাণ সন্ধানে হন্যে। এনআরসি বিরোধী আন্দালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নাগরিকত্ব সুরক্ষা মঞ্চও। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পিপলস ফোরামের পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি হরিপদ বিশ্বাস বলেন, ‘এই সংগঠনের অধীন বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নাগরিকত্ব সুরক্ষা মঞ্চ। মঞ্চের তরফে আন্দোলনের কর্মসূচী নেওয়া হচ্ছে।’