ঠিক ৪৭ দিনের যাত্রার পথ গতকাল ছিল সেই মহাক্ষণ। একেবারে দিনক্ষণ মেপে চাঁদে নামছিল বিক্রম। দক্ষিণ মেরুর কাছে। যেখানে আজ পর্যন্ত আর কোনও দেশের যান পা রাখেনি। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে একে ঐতিহাসিক বলছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চোখ মেলে চেয়ে ছিল প্রায় গোটা দেশ। মধ্যরাতে চাঁদের মাটিতে ভারতের বিক্রম দেখতে হাজির ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীও। সবই ঠিক ছিল। পরিকল্পনা মতোই নেমে আসছিল সে নিখুঁত ভাবে। কিন্তু চাঁদের মাটি থেকে আকাশে ২.১ কিলোমিটার উপরে থাকার সময় আচমকাই বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর মিশন কন্ট্রোলের।
প্রসঙ্গত, শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রযান ২-এর যাত্রা থমকে গিয়েছিল শেষ মুহূর্তে। ত্রুটি সামলে এক সপ্তাহ পরেই গত ২২ জুলাই বাহুবলী রকেটের ঘাড়ে চেপে রওনা দিয়েছিল ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান। তখনই ঠিক হয়েছিল যাত্রা পিছিয়ে গেলেও আগের নির্ধারিত দিনেই গন্তব্যে পৌঁছৈ দেওয়া হবে চন্দ্রযান ২-কে। ৭ সেপ্টেম্বর ১০০ দিন পূর্ণ হবে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের। সাফল্যের তালিকায় চন্দ্রবিজয়কে জুড়ে নেওয়ার পক্ষে এমন ভাল দিন আর কী হতে পারত শাসক শিবিরের কাছে! কিন্তু হল না। নামার আগেই হারিয়ে গেল বিক্রম।
ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযানের এই ল্যান্ডারের পেটে রয়েছে ছোট্ট চাঁদের গাড়ি বা রোভার প্রজ্ঞান। ইসরোর পরিকল্পনা ছিল, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে যখন ভোর হবে, ঠিক ছিল তার আগেই খুলে যাবে বিক্রমের ডালা বা র্যাম্প। তার উপর দিয়ে গড়িয়ে নামবে প্রজ্ঞান। ভোর ৫টা ১৯ মিনিটে। ভোরের আলো ফুটলে সেই আলো সোলার প্যানেলে মেখে জেগে উঠবে চাঁদের গাড়ি। ভোর ৫টা ২৯ থেকে প্রতি মিনিটে ৬০ সেন্টিমিটার করে এগোবে। তার পরে বিক্রম প্রজ্ঞান শুরু করবে খোঁজ, কী কী আছে চাঁদের মাটিতে ও চাঁদের উপরে! কিন্তু হঠাৎ কী হল বিক্রমের? জানে না ইসরোও। চলছে তথ্য বিশ্লেষণ।
উল্লেখ্য, ২০১৯-এর ভোটের আগে এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মহাকাশের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল ইসরো। সেবার ইসরো বা ডিআরডিও-র কোনও কর্তা নন, খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীই সেই সাফল্য প্রচার করে বিরোধীদের বিস্তর সমালোচনা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলেই প্রমাণ, জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে সেটাও কাজে এসেছিল মোদীর। এবার সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার দিনে এমন একটা সাফল্য আসতে চলেছে— তাই গতকাল সকাল থেকেই একের পর এক টুইট করে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তাঁর সেই আশা যে পূরণ হল না, তা বলাই বাহুল্য। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।