গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন মুক্তি পেয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘গুমনামী’র টিজার। আর তারপর থেকেই চলছে বিতর্ক। প্রথমেই রণংদেহি মেজাজে আসরে নেমেছিলেন নেতাজি গবেষকদের একাংশ। সৃজিতকে পাঠানো হয়েছিল আইনি নোটিস। প্রয়োজনে মামলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেউ কেউ। তবে সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া বোধহয় এসেছিল নেতাজির পরিবারের সদস্য তথা অধ্যাপক সুগত বসুর তরফেই। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘উত্তর প্রদেশের ক্রিমিনাল গুমনামীকে নিয়ে যাঁরা ছবি বানিয়েছেন, তাঁরা হয় মূর্খ নয় শয়তান।’ এবার সুগত বসুর এই বক্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন খোদ পরিচালক।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, গুমনামী বাবার কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তিই নেই, পুরোটাই গুজব। স্রেফ নেতাজির প্রতি বাঙালির আবেগ উস্কে একটা তাৎক্ষণিক সাফল্যের জন্যই এই সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে এক সংবাদ সংস্থার কাছে সৃজিত বলেন, প্রথমত, আমার ছবি গুমনামী বাবা নিয়ে নয়। আমার ছবির আধার মুখার্জি কমিশনের বৈঠক যা, ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ঘটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখানে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের তিনটি সম্ভাব্য থিওরি নিয়ে আলোচনা হয়। প্লেন ক্র্যাশে মৃত্যু, রাশিয়াতে মৃত্যু এবং ভারতবর্ষে এসে গুমনামী বাবা হিসেবে মৃত্যু। আমার ছবি দুটি চরিত্রের মাধ্যমে এই কমিশনে হওয়া তর্কাতর্কি ও সাক্ষ্য-প্রমাণকেই তুলে ধরে।
এরপরেই সুগত বসুর কথার জবাবে সৃজিতের পাল্টা, যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা হয় অবুঝ, নয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইচ্ছে করে বুঝতে চাইছেন না। আরও স্পষ্ট করে তিনি বলেন, যাঁরা এতবার এত জায়গায়, পোস্টারে, টিজারে, ইন্টারভিউতে পড়ার পরেও ‘বুঝতে পারছেন না’ তাঁরা মূর্খ বা শয়তান কোনওটাই নয়, কেবল তাঁদের ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট (আই কিউ) সদ্যোজাত অ্যামিবার থেকেও কম। আর নেতাজির প্রেক্ষিতে গুমনামী বাবা নিয়ে আলোচনা যদি মূর্খামি, শয়তানি বা অবমাননা হয়, তাহলে সেই তালিকায় আছেন ললিতা বসু, আইএনএ ভেটেরান পবিত্র মোহন রায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী লীলা রায়, কলকাতা এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট, সরকার গঠিত মুখার্জি কমিশনও।
সৃজিতের কথায়, ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে আমি আগেও বহু সিনেমা করেছি। রাজকাহিনী, জাতিস্মর, আর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল, এক যে ছিল রাজা, যেখানে ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কোর্ট কেসের মতো জটিল রহস্যকে আমি আইনের নিরপেক্ষ পরিকাঠামোর মধ্যে তুলে ধরে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। কাজেই গুমনামী মোটেও নতুন কিছু নয়, বা এর মধ্যে কোনও তাৎক্ষণিক চমকও নেই। এবং সেই কারণে সেন্সর বোর্ড যে শুধু কাঁচি না চালিয়ে ইউ সার্টিফিকেট দিয়েছে এই ছবিকে তাই-ই নয়, এর নিরপেক্ষতার প্রশংসাও করেছে।