‘দলে থাকবেন কিনা, সেটা একান্তই ওঁদের ভাববার বিষয়। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করার কিচ্ছু নেই। দলে কার গুরুত্ব বেশি এটা আমাদের এখানে কোনও ব্যক্তি ঠিক করে না, দলই ঠিক করে।’ দেবশ্রীর যোগদানে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি ও তাতে তাঁদের দলে থাকা, না থাকা প্রসঙ্গে এমনটাই জানিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। মুকুল রায়ও সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ‘দলের নীতি ও আদর্শই বড় কথা।’ তবে কি বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পক্ষে’ দাঁড়াবার লোক কি ক্রমেই কমে আসছে? রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও এবার তাঁদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার পরে এই প্রশ্ন সামনে এল। কারণ বিজেপিতে শোভন-বৈশাখীর যোগদানের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন এই জয়প্রকাশই।
প্রসঙ্গত, শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপির অন্দরে শুরু হওয়া যাত্রাপালার মূল বিষয় রায়দীঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়। তাঁর বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা এবং সেই সূত্রে দলের রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দেখা করার পিছনে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ভূমিকা আছে বলে বুধবারই দাবি করেছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বয়ং। আর তারপরই বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে দেবশ্রীর বিজেপি শিবিরে যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহুয়ার পাশাপাশি জয়প্রকাশের দিকেও আঙুল তুলেছেন শোভন। তাঁর অভিযোগ, ‘মহুয়া দেবশ্রীর সঙ্গে কথা বলতে দিলীপবাবুকে অনুরোধ করেছিলেন, এই কথা দিলীপবাবু প্রকাশ্যে বলার পরে ষড়যন্ত্রটা স্পষ্ট হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপিতে আমার যোগদানের কথাবার্তা যখন চলছিল, তখন থেকেই ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। যে আশঙ্কার কথা আমি অরবিন্দ মেননকে বলেওছিলাম। কে বা কারা যোগসূত্র করে দেবশ্রীকে বিজেপি দফতরে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে, তা স্পষ্ট। মহুয়ার বিষয়েও বিজেপিকে জানিয়েছিলাম। আর নানা সূত্র থেকে জেনেছি, দেবশ্রীকে বিজেপির দিল্লীর দফতরে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। দেবশ্রী যে দলের নেতৃত্বের সঙ্গেই দিল্লী গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট।’ এরই প্রতিক্রিয়ায় জয়প্রকাশ বলেন, ‘শোভনবাবু কেন এ কথা বলেছেন, তিনিই বলতে পারবেন। আমি শুধু বুঝতে পারছি না, এক জন রাজনৈতিক নেতা একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে কোনও রাজনৈতিক কথা না বলে এ সব ব্যক্তিগত কথা চর্চা করছেন কেন?’
জয়প্রকাশের দাবি, ‘আমি দেবশ্রী রায়ের সিনেমা দেখেছি। তৃণমূল বিধায়ক হিসাবেও কখনও কখনও তাঁকে টিভিতে দেখেছি। এর বাইরে তাঁর সঙ্গে কোনও পরিচয় আমার নেই। কোনও দিন তাঁর সঙ্গে দেখাও হয়নি।’ তাঁর কথায়, ‘আমি দিল্লীতে দেবশ্রী রায়কে শোভনবাবু এবং বৈশাখীদেবীর পিছন পিছনই দলীয় দফতরে ঢুকতে দেখেছিলাম। আমার সামনেই বৈশাখীদেবী শোভনবাবুকে দোষারোপ করে বলেছিলেন, তিনিই দেবশ্রীকে সেখানে ডেকেছেন। শোভনবাবু সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদও করেছিলেন।’ উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে মুকুলের সঙ্গে বৈঠকের পর সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা বললেও কলকাতায় ফিরতেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিলেন শোভন। আর এবার দিলীপের পাশাপাশি জয়প্রকাশকেও দুষতে শুরু করলেন তিনি। যার ফলে শোভন-বৈশাখীর বিজেপি ত্যাগের জল্পনায় নতুন করে ঘি পড়ল।