গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর থেকেই কার্যত স্তব্ধ ভূস্বর্গ। উপত্যকার নেতা-নেত্রীরা বারবারই দাবি করে আসছেন যে, গোটা কাশ্মীর জুড়েই এখন ‘তালাবন্ধ’ পরিস্থিতি। কিন্তু তারপরও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি কয়েকদিন ধরে বলে আসছে যে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পরে কারও মৃত্যু হয়নি। সেখানের পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে এবার এক কাশ্মীরি কিশোরের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই মুখ পুড়ল গেরুয়া শিবিরের।
মাথায় জখম নিয়ে শ্রীনগরের ‘শের-ই কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স’ (এসকেআইএমএস)-এ ভর্তি হয়েছিলেন সৌরার আসরার আহমেদ খান (১৭)। মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও বাঁচানো যায়নি আসরারকে। বুধবার ভোরে তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে দেওয়া হয়নি কোনও ডেথ সার্টিফিকেট। পুরনো কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্ফু জারি করে পুলিশ ভ্যানে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কবরস্থানে। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কীভাবে জখম হয়েছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র আসরার? স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়, আর তার পরের দিন সৌরায় বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামেন মানুষ। শান্ত, নম্র ছেলে আসরারও ছিলেন সেখানে। কেউ পাথর ছোঁড়েনি, আগুন দেয়নি। শুধুই স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানানো চলছিল। তবে নিরাপত্তা বাহিনী হঠাৎই কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করে। আর সেই কাঁদানে গ্যাসের একটা গোলাই খুব কাছ থেকে মাথায় লাগার পরে লুটিয়ে পড়ে আসরার। তবে স্থানীয়দের এই দাবি মানছে না প্রশাসন।
সেনা বাহিনীর ১৫ নম্বর কোরের জিওসি-র সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মুনির খান বলেন, ‘৪ আগস্টের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কোথাও কোনও অসামরিক নাগরিক মারা যাননি। আমি নিশ্চিত, বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটেই জখম হয়েছিলেন আসরার।’ তবে ডাক্তাররা জনান্তিকে বলছেন, ‘কাঁদানে গ্যাসের গোলার ঘায়ে আসরারের মাথার একদিক থেঁতলে গিয়েছিল। তবে প্রশাসনের নির্দেশে তার পরিবারকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি।’
উল্লেখ্য, আসরারের দেহ নিয়ে যাতে বিক্ষোভ না হয়, তার জন্য পুরনো কাশ্মীরের একটা বড় এলাকা জুড়ে এ দিন কার্ফু জারি করা হয়। এলাকায় ঢোকার সব রাস্তায় চেকপোস্টও বসানো হয়। শুধু তাই নয়, এ খবর যাতে উপত্যকার বাইরে জানাজানি না হয়, সেজন্য বাইরের লোক এবং সাংবাদিকদের ওই এলাকায় ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে তার মধ্যেও কয়েক জন শেষকৃত্যে পৌঁছে যান। আসরারের ভাই শাকির খান বলেন, ‘ও যে মারা গিয়েছে, অনেক আত্মীয়ই তা জানে না।’ স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে বিজেপি তথা কেন্দ্র সরকার।