বহুদিন যাবৎ উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছিল আসাম জুড়ে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। এর মধ্যে রয়েছে বাকসার তামুলপুর অঞ্চলের অহিয়াবাড়ি, দোয়ামাখা, বড়লিয়াপার, পূর্ব কচুকাটা প্রভৃতি গ্রামের হাজার তিনেক মানুষও। যাঁদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। সামনে পুজো। কিন্তু এই উৎসবের মুখেও ওঁদের সকলের মুখে আম্মহত্যার কথা! গণআত্মহত্যার হুমকি। অভিযোগ, বেঁচে থাকার আর কোনও রাস্তা খোলা নেই তাঁদের। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের ওপর নেই কোনও ভরসা।
প্রায় একই ছবি, গুয়াহাটির অদূরে জাগি রোডেও। সেখানেও ২০টি গ্রামের ৭ হাজার মানুষের নাম নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা বলেন, ‘ওপার থেকে (বাংলাদেশ) থেকে তাড়া খেয়ে এদেশে এসেছিলাম সেই ছোটবেলায়। এবার এদেশ থেকে তাড়া খেয়ে কোথায় যাব? মরণ ছাড়া তো গতি নেই। যত জ্বালা হিন্দুদেরই!’ স্বগতোক্তি বৃদ্ধার। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত ধুবড়ি জেলায় বাদ পড়েছেন ২৫ হাজার মানুষ। বেশির ভাগই হিন্দু। সবমিলিয়ে নাগরিকত্বের প্রশ্নে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন আসামের ১৯ লাখ বাসিন্দা।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিজেপি নেতারা নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর কথা বলছেন। তবে ভোট মিটতেই বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না দিল্লীর নেতারা। অন্যদিকে, বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র জমা দিয়েছে আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি। যদিও কেন্দ্র বলছে, এনআরসি তালিকা সঠিক ভাবেই তৈরি হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার অবশ্য তাঁদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমনই যে আতঙ্কে প্রতিবাদের ভাষাও হারিয়ে ফেলছেন মানুষ। চারদিকে আধাসেনার টহলদারি। এরই মধ্যে বিদেশি সাংবাদিকদের ওপর কাশ্মীরের মতো আসামেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এক মহিলা বিদেশি সাংবাদিককে বাধ্য করা হয়েছে রাজ্য ছাড়তে।
আলোচনাপন্থী জঙ্গী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ বেঙ্গলিস (এনএলএফবি)-এর স্বঘোষিত কমান্ডার-ইন-চিফ কৃষ্ণ পোদ্দার জানান, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত বিধানসভা ভোটের নির্দল প্রার্থী রবিন বিশ্বাসেরও নাম নেই তালিকায়। হিন্দুপ্রধান গ্রামগুলির বাসিন্দারা কেউ এসেছেন, ১৯৬৬ সালে, কেউবা ১৯৫১। সবারই নাগরিকত্বের প্রমাণ আছে। এনআরসি কর্তাদের দেখিয়েছেন। বারবার হাজিরা দিয়েছেন। তবু তাঁদের নাম নেই। তাই তাঁরা আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চাইছেন।’ তিনি আরও জানান, বহু পরিবারে বাবা-মা’র নাম তালিকায় আছে, সন্তানদের নেই। আবার সন্তানদের নাম আছে। বাবা-মা’র নেই এমন উদাহরণও আছে। কিন্তু ভয়ে কেউ নিজের পরিচয় দিতে চাইছেন না।