কংগ্রেস নেতা জয়পাল রেড্ডির স্মরণসভায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর জোশী। কিন্তু তারই মাঝে এমন একটা কথা বলে দিলেন, যা বিজেপি-র বেশিরভাগ নেতারই “মন কি বাত” । জোশী বলেন, “আমি মনে করি, আজকের দিনে এমন একজন নেতৃত্ব দরকার যিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে নীতিগত তর্ক করতে পারেন। তাঁর যেন কোনও দ্বিধা বা ভয় না থাকে। তিনি এমন মনে না করেন যে তাঁর কথায় প্রধানমন্ত্রী রেগে যেতে পারেন”। দল ও দেশের স্বার্থেই সেরম একজন নেতা দরকার।
বিজেপি-র মধ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করে বার বার খবরের শিরোনামে এসেছেন জোশী। এ বারও তিনি যে কথা বলেছেন, তা গেরুয়া শিবিরের বেশিরভাগ এর মুখের কথা।
বিজেপি যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের কথা বলে বা প্রকাশ্যে দাবি করে তা কার্যত এখন উঠে গেছে। বরং বিজেপি-র ভিতরে পরিবেশ এখন এমনই যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যা বলবেন তাই শেষ কথা। দলে আলোচনা খুব বেশি হয় না। শুধু সিদ্ধান্ত জানা যায়।
কিন্তু আডবাণী-বাজপেয়ী জমানায় এমনটা হতো নাহ। দলের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে ঘরোয়া বৈঠকে বা প্রকাশ্যে নেতারা তাঁদের মত জানাতেন। এ সব ব্যাপার আডবাণী ও বাজপেয়ী সবসময়ই উদার দৃষ্টিভঙ্গী ছিলো। কখনও শাস্তির কোপে পড়তে হয়নি প্রতিবাদী বিজেপি নেতাদের। কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই। বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই । অনেকেই মনে করেন, বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করতে গেলে তাঁর পদই চলে যাবে।
অভ্যন্তরীণ পরিবেশই এমন যে চিন্তার আদানপ্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গোটা ব্যাপারটাই এখন ‘ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের’ মতোই। বিজেপি-র অন্দরমহল এর মতে, অরুণ জেটলিই হয়তো শেষ ব্যক্তি যিনি মোদীর মুখের উপরেই আপত্তি করতে পারতেন। আর হয়তো সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ দু-এক জন নেতা তা করতে পারেন। কিন্তু বাকি কারও প্রায় সেই সাহস নেই।
বস্তুত জোশী অসন্তুষ্ট এই কারণেই। এ বার লোকসভা নির্বাচনে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও তাঁকে যে প্রার্থী করা হবে না সে ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি। মোদী ও শাহ একতরফা সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আডবাণী-জোশীদের জানিয়েছিলেন । তাতে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন দুই বর্ষীয়ান নেতা। দলের সেই একতরফা নীতির কথাই এ দিন ফের বোঝাতে চান জোশী। শুধু মুখে নরেন্দ্র মোদীর নামটি আনেননি। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী।