মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের প্রকল্প ‘সুন্দরিনী’র খাঁটি গোরুর দুধকে এবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রির উদ্যোগ নিল জেলা প্রশাসন। আমুল কিংবা মাদার ডেয়ারির মতো অত্যাধুনিক দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ মেশিনে প্যাকেট করে প্রতিদিন বিক্রি করা হবে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত গোরুর দুধ। এর বিশেষত্ব হল গোপালন থেকে দুধ উৎপাদন পর্যন্ত কোথাও কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে না। এমনকী প্লাস্টিকের প্যাকেটের জায়গায় এমন পরিবেশবান্ধব পাউচ ব্যবহার করা হবে, যা সহজেই মাটিতে মিশে যাবে।
মথুরাপুর-১ ব্লকের কৃষিমান্ডির ভিতর এক একর জায়গায় অত্যাধুনিক প্রসেসিং প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব সেই প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ হাজার লিটার দুধের পাউচ প্যাকেট তৈরি হবে। প্রতিটি পাউচ প্যাকেট হবে ৫০০ এমএলের। চলতি বাজারদরের সঙ্গে সমতা রেখেই তা দেওয়া হবে। পাউচগুলি সবই পরিবেশবান্ধব করা হচ্ছে। যাতে প্যাকেটগুলি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ধরনের দুধের প্যাকেট এই প্রথম হচ্ছে। মথুরাপুরের কৃষি বিপণন বিভাগের কৃষিমান্ডির ওই ফাঁকা জায়গা সম্প্রতি ঘুরে দেখেন জেলাশাসক রত্নাকর রাও, অতিরিক্ত জেলাশাসক মৃণাল রানো, সংসদ সদস্য সিএম জাটুয়া, প্রাণিসম্পদের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানবেন্দ্র হালদার ও বিধায়ক দেবশ্রী হালদার। চলতি বছরেই যাতে প্রকল্প শুরু করা যায়, সে ব্যাপারে সুন্দরিনীর আধিকারিকদের নির্দেশ দেন প্রশাসনের কর্তারা।
সুন্দরিনীর যাবতীয় জিনিস যথা ডিম, মুগ ডাল, মধু, ঘি থেকে দুধসর চাল সবই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার। এখানকার ডেয়ারি কোঅপারেটিভ সোসাইটির দশ হাজার মহিলা বাড়িতে গোরু পোষেন। গোরুগুলিকে সব জৈব জিনিস খাওয়ানো হয়। প্রধান খাদ্য ঘাসও তৈরি হয় জৈব উপায়ে তৈরি সার দিয়ে। কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় না। এসব দেখভালের জন্য প্রশাসনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে। মথুরাপুরে কৃষিমান্ডির বাইরে দাঁড়িয়ে সেখানকার সভাপতি অমিয় গায়েন বলেন, মুগের ডাল ও পাতা গোরুর খুব ভালো খাবার। তাতে দুধ খুব ভালো হয়। এখানে জৈব সার দিয়ে মুগ চাষ হয়। ফলে গোরুর শরীরে কোনও রাসায়নিক যাচ্ছে না। একবছর আগে কৃষিবাজার চালু হলেও শেষ পর্যন্ত তা জমেনি। ফলে প্রায় পুরোটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেই জায়গাকে সুন্দরিনীর দুধের প্ল্যান্ট বসিয়ে তাকে কাজে লাগাতে চায় প্রশাসন।
জেলাশাসক জায়গাটি ঘুরে দেখার পর বলেন, কৃষিবাজারের জায়গাটি আলাদা রেখে অনেকটা জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে প্ল্যান্ট সহ সুন্দরিনীর অন্য কাজগুলি হবে। আপাতত একটি বিল্ডিং অফিস করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। তার তলায় ঘি, মুগ ডাল, ডিম প্যাকেজিংয়ের কাজ হবে। এর ভিতর বিশাল ফাঁকা জায়গাতে প্ল্যান্ট বসানো হবে। অত্যাধুনিক প্ল্যান্ট বসানোর জন্য ডেয়ারি প্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞর সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এজন্য টাকার অভাব হবে না। এমনিতে আমাদের দুধ উৎপাদন এখন হচ্ছে। আপাতত সাত হাজার গোরু রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে আরও এক হাজার গোরু দেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্ল্যান্ট বসানোর কাজ হলে কলকাতার বাজার ধরা হবে। এর মধ্যে কলকাতার বড় মলগুলির সঙ্গে কথা হয়েছে।