বিজেপির অন্দরে এ যেন এক যাত্রাপালা। এক পাশে শোভন-বৈশাখী ও বিপরীতে দিলীপ- এই দু’পক্ষের মধ্যে চলছে দড়ি টানাটানির খেলা। একে অপরকে দোষারোপের পালা। একদিকে যদি ওঠে দলে মর্যাদা না দেওয়ার অভিযোগ। তো অন্যদিকে উঠছে শৃঙ্খলা না মানার দোষারোপ। সেই নিয়েই সম্প্রতি উত্তাল বঙ্গ-রাজনীতি। তবে শেষমেশ শোভন-বৈশাখীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মান ভাঙাতে হাল ছেড়ে দিল বিজেপি নেতৃত্ব। হাবে-ভাবে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁদের দলে থাকা বা না থাকা নিয়ে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একেবারেই ভাবিত নন, বুধবার তা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন মুকুল রায়-কৈলাস বিজয়বর্গীয়রাও।
এদিন বিমানবন্দরে নেমে বিজেপিতে দেবশ্রীর যোগদানে শোভন বৈশাখীর আপত্তি ও তাতে তাঁদের দলে থাকা, না থাকা প্রসঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘দলে থাকবেন কিনা, সেটা একান্তই ওঁদের ভাববার বিষয়। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করার কিচ্ছু নেই। দলে কার গুরুত্ব বেশি এটা আমাদের এখানে কোনও ব্যক্তি ঠিক করে না, দলই ঠিক করে।’ অন্যদিকে, প্রায় একই প্রশ্ন মুকুল রায়কে করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওঁদের এখনও কথা হয়নি। তবে এইটুকু বলে রাখি দলের নীতি ও আদর্শই বড় কথা।’ অর্থাৎ শোভন-বৈশাখীর ‘অনৈতিক’ দাবিকে যে বিজেপি শিবির এবার বিশেষ আমল দিতে নারাজ, তা দলীয় নেতৃত্বের কথাতে স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতেই প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা চায়ের আড্ডায় বসে বৈশাখী-শোভনের মানভঞ্জন করেছিলেন মুকুল। দিল্লীতে দাঁড়িয়ে মুকুল জোর গলায় বলেছিলেন, ‘সমস্যা মিটে গিয়েছে। শোভন বৈশাখী বিজেপিতে ছিলেন, আছেন।’ একই সুর শোনা গিয়েছিল বাকি দুজনের গলাতেও। কিন্তু কলকাতায় ফিরতেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যান শোভন। বলেন, ‘দেবশ্রী রায়ের বিষয়ে আমার মতামত কী, সে কথা প্রথম দিনই নাড্ডাজিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বা দিলীপ ঘোষকেও একই কথা বলেছিলাম। কালকে মুকুল রায়কেও সে কথাই বলেছি।’
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘প্রথম দিনেই আমাকে জানানো হয়েছিল, দেবশ্রী রায় হল ক্লোজড চ্যাপ্টার। তারপরেও রোজ একই প্রশ্ন করলে আমার উত্তর বদলাবে না। এ বিষয়ে আমি নতুন করে আর একটা কথাও খরচ করতে চাই না।’ এর থেকেই শোভনের ইঙ্গিত স্পষ্ট, শর্ত না মানলে তাঁর পক্ষে বিজেপি করা সম্ভব নয়। শোভনের পাশে দাঁড়িয়ে বৈশাখীও স্পষ্ট বলেন, ‘কাকে দলে নেবেন, কাকে নেবেন না, সেটা অবশ্যই দিলীপ ঘোষ স্থির করবেন। তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি নিজের মতো করেই সিদ্ধান্ত নিন। তারপরে আমরা যা করার করব। আমাদের অবস্থান তো আমরা আগেই জানিয়ে রেখেছি।’ শোভন-বৈশাখীর এই একগুয়েমিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না গেরুয়া শিবির। যে কারণে এবার স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুকুল-কৈলাসরা।