উৎপাদনে আরও কাটছাঁট করেছে মারুতি সুজুকি। গত ১০ বছরে প্রথমবার দুদিনের জন্য উৎপাদন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল দেশের সর্ববৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, হরিয়ানার মানেসর ও গুরুগ্রাম কারখানায় আগামী ৭ ও ৯ সেপ্টেম্বর গাড়ির উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। এই দুদিন ‘অনুৎপাদক দিন’ বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ ওই দিন কোনও গাড়ি তৈরি হবে না। বুধবার সকালে মারুতির এই নতুন ঘোষণায় কার্যত হইচই ফেলে দিয়েছে তামাম শিল্পমহলে।
সেপ্টেম্বরে পশ্চিম ভারতে গণেশ চতুর্থী এবং দক্ষিণ ভারতে ওনাম পালিত হয়। সারা বছরে দেশের মোট যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রির এক-তৃতীয়াংশ এই উৎসবের মরশুমে হয়। ফলে সার বছরের তুলনায় জুলাই-অগস্টে সংস্থাগুলি বেশি সংখ্যায় গাড়ি উৎপাদন ও ডিলারদের বিক্রি করে থাকে। এমন একটি সময়ে গাড়ির উৎপাদন ও বিক্রিতে মন্দা গোটা শিল্প ক্ষেত্রের মন্দার মন্দার প্রতিফলন।
শিল্প মহলের কর্তারা মনে করছেন, বার্তা পরিষ্কার। জুলাই মাসেই গাড়ি ব্রিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। অগস্ট মাসের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহু। প্যাসেঞ্জার করা তথা সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহারের জন্য গাড়ি এবং ট্রাক বিক্রি দুই কমেছে। সামগ্রিক ভাবে প্যাসেঞ্জার কার বিক্রি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ট্রাক বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ। পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাক বিক্রি কমে যাওয়া অর্থনীতির বড় সূচক। এর মানে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের গতি শ্লথ হচ্ছে। দেশের দুটি প্রধান ট্রাক নির্মাতা সংস্থা অশোক লেল্যান্ড এবং টাটা মোটরসের ট্রাক বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ৫৮ শতাংশ।
মারুতির গাড়ি বিক্রিও কমছে হু হু করে। এমনিতেই অগস্ট মাসে গাড়ি উৎপাদন ৩৩.৯৯ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। জুলাইতে তারা উৎপাদন কমিয়েছিল ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমশ উৎপাদন কমানো হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর মারুতির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের গাড়ি বিক্রি কমে গিয়েছে ৩৩ শতাংশ। গত বছর অগস্ট মাসে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। সেই তুলনায় এ বছর অগস্ট মাসে তাদের গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৪১৩টি।
এই পরিস্থিতিতে গাড়ি শিল্পে বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মতে, প্রায় দশ লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হতে পারে এই শিল্পে। মারুতির এ দিনের ঘোষণা তাই তাঁরা অশনিসংকেত হিসাবেই দেখছেন।