এক ফোনেই মুশকিল আসান। গত ১ মাসে ‘দিদিকে বলো’র নম্বরে ফোন করে সাহায্য পেয়েছেন প্রত্যেকে। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কোনো অভিযোগ এতদিনে ছিল না। এবার সেই পারিবারিক সমস্যারই অভিযোগ এল মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা এই টোল ফ্রি নম্বরে। আর এই ফোনেই নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে সুরাহা পেয়েছেন চুঁচুড়ার বাসিন্দা প্রবীণ ঘোষ দম্পতি।
জানা গেছে, ডানলপ কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অজিত ঘোষ সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে তিনতলা বাড়ি বানিয়েছিলেন চুঁচুড়ার বুনোকালীতলায়। তার আগে দু’মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, একমাত্র ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড় করেছেন। প্রাইভেট টিউটর হিসাবে এলাকায় নামও করেছে সেই ছেলে। সংসারী হয়েছে। স্ত্রী শ্যামলীদেবী ও ছেলে-বউমা-নাতনিকে নিয়ে শখের বাড়িতে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দেবেন বলেই আশা করেছিলেন অজিতবাবু।
কিন্তু, মানুষ ভাবে এক, হয় এক। যার জন্য সর্বস্ব দিয়েছেন, সেই ছেলেই হয়ে উঠল তাঁর চরম শত্রু! পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর চারেক যাবৎ শ্বশুর-শাশুড়ির উপর পুত্রবধূর অত্যাচার চলছিল। ক্রমে তা লাগামছাড়া হয়ে ওঠে। কটুবাক্য তো বটেই, বৃদ্ধ মা-বাবার গায়ে হাত তুলতেও কসুর করত না তাঁর ‘গুণধর’ ছেলে জয়ন্ত। অভিযোগ, ছেলে আদতে বাড়ি হাতিয়ে মা-বাবাকে পথে বসানোর ছক কষেছিল। চার বছর আগে জালিয়াতি করে বাড়িটি নিজের বউ ও মেয়ের নামে লিখিয়ে নেয় সে। আর তারপরই শুরু অত্যাচারের পালা।
বৃদ্ধ অজিতবাবুর ছেলের কাছে শিক্ষা নেয় অনেক ছাত্রছাত্রীই। কিন্তু আখেরে দেখা গেল, সেই ছেলে শুধু পেশায় শিক্ষকই হয়েছে। মানুষ হয়নি! জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে সেটা যখন বুঝতে পারলেন সেই বৃদ্ধ দম্পতি, ততদিনে মাথার ছাদ হারিয়েছেন তাঁরা। ছেলে-বউমার হাতে একটানা শারীরিক-মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়ে ভরসা হারিয়েছেন সংসারের উপর। শেষমেশ প্রতিকার পেতে ফোন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেল্পলাইনে। আর সেই ফোনের দৌলতেই পায়ের নিচে মাটি ফিরে পেয়ে এখন আপ্লুত চুঁচুড়ার ঘোষ দম্পতি।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে হতভাগ্য দম্পতির দুর্ভোগের অভিযোগ আসতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার চুঁচুড়া থানার পুলিশ অফিসাররা অজিতবাবু-শ্যামলীদেবীকে পত্রপাঠ বুনোকালীতলার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পাশাপাশি প্রশাসনের তরফে ছেলে জয়ন্তকে সতর্ক করা হয়। চুরাশি বছরের অজিতবাবু এহেন অভাবিত প্রাপ্তিতে নিজের ভাষা হারিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী শ্যামলীদেবী বলেছেন, “নিজের পেটের ছেলের চরম অত্যাচার সহ্য করেছি। তবে এ বার আর ভয় পাব না। কারণ এখন পাশে মুখ্যমন্ত্রী আছেন।”