প্রায় ছয় দশক ধরে শিক্ষকতা ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত তিনি। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের ওপর বিশেষ দখল তাঁর। পেয়েছেন ইতিহাসের নোবেল’ বলে পরিচিত ক্লুগ পুরস্কারও। এবার ‘এমেরিটা অধ্যাপিকা’ হিসেবে থেকে যাওয়ার জন্য এ হেন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব তথা সর্বজনবিদিত ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের থেকে বায়োডেটা চাইল দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় যারপরনাই অপমানিত প্রবীণ ইতিহাসবিদ সংবাদ মাধ্যমে এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও বায়োডেটা দেবেন না। সে সবের প্রশ্নই নেই। তাঁর কথায়, ‘এই স্ট্যাটাসটি আজীবন দেওয়া হয়, জেএনইউ কর্তৃপক্ষ এই নিয়মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আমার কাছে এখন বায়োডেটা চাওয়া হচ্ছে।’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বায়োডেটা চেয়ে এ কথাই বলেছেন যে, তারা ৭৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী এমন সমস্ত অধ্যাপকের স্ট্যাটাস নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছেন।
গোটা ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন। জেএনইউটিএ-এর তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, এমেরিটা অধ্যাপিকার স্টেটাস আজীবনের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৃথিবী বিখ্যাত ইতিহাসবিদের কাছে তাঁর বায়োডেটা চেয়ে শুধু তাঁকে অসম্মান করেনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকেও ভূলুন্ঠিত করেছে। অবিলম্বে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের ক্ষমা চেয়ে থাপারের কাছে চিঠি পাঠানোর দাবি জানিয়েছে অধ্যাপক সংগঠন।
ওই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এটি পুরোপুরি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। অধ্যাপক থাপার কেন্দ্রের নীতিমালা, শিক্ষার বেসরকারিকরণ, প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষয় এবং জওহরলাল নেহেরুসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা সম্পর্কে তীব্র সমালোচক। কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী অধ্যাপকদেরকে এই পদটির জন্য বেছে নেওয়া হয়। তার জন্য আর্থিক কোনো সুবিধা নেই। তবে তার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ করা হয়। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেওয়া, গবেষণায় শিক্ষার্থীদের তদারকি করা ও অনুপ্রেরণা দেওয়াসহ সম্মানজনক কাজগুলো করে থাকেন।’
স্বভাবতই থাপারের বায়োডেটা চাওয়া নিয়ে নতুন বিতর্কে জেএনইউ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাফাই, এই বায়োডাটা চাওয়ার মধ্যে এমেরিটা স্টেটাস তুলে নেওয়া বা সেই কাজ চালিয়ে যাওয়া আটকানোর কোনও ব্যাপার নেই। এটা নিয়মমাফিক চাওয়া হয়েছে। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কারণেই এই পদক্ষেপ নয় তো? তাঁদের মতে, যে ভাবে গত বছর অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়েক এবং উৎসা পট্টনায়েকের দফতরে তালা ঝোলানো হয়েছে, এটাও সেই মনোভাবেরই অংশ।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞ এই শিক্ষক ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জেএনইউয়ের অধ্যাপক ছিলেন থাপার। এরপর ১৯৯৩ সালে এমেরিটা অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেন তিনি। জেএনইউ-কে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার জন্য এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ছ’দশকের অধ্যাপনা জীবন থাপারের। আন্তর্জাতিক সম্মানের তালিকাও দীর্ঘ। অক্সফোর্ডের সাম্মানিক ডক্টরেট, আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্যপদ থেকে ‘ইতিহাসের নোবেল’ বলে পরিচিত ক্লুগ পুরস্কার থেকে বহু আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানিত এই ইতিহাসবিদ।
উল্লেখ্য, তাঁর লেখা ‘পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালস’ বইটিতে মোদী সরকারের আমলে ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন থাপার। সেই কারণেই এভাবে তাঁকে হয়রান করার চেষ্টা চলছে বলে ধারণা একাংশের।