হতে পারতো টিভিতে দেখা সেই চিরাচরিত স্প্যানিশ টাচ। বদলে পাওয়া গেল বল পেলেই সেই উড়িয়ে দেওয়ার খেলা। ভাবা হয়েছিল, দুই দলের স্প্যানিশ প্লেয়ারদের তিকিতাকায় উদ্বেল হবে গ্যালারি। বদলে মিলল শুধুই হতাশা আর বিরক্তি। খেলা শুরু হওয়ার আগে দু’দলের স্টার্টিং লাইন দেখে চমকে গিয়েছিলেন দু’দলের সমর্থকরাই। একদিকে ইস্টবেঙ্গল যেমন প্রথম একাদশে খেলায়নি স্যান্টোস কোলাডোকে, অন্যদিকে বাগানের প্রথম একাদশে ছিলেন না সালভাদোর মার্টিনেজ পেরেজও।
দুই কোচের এই সিদ্ধান্তের ফল দেখা গেল মাঠে। গোটা মাঠ জুড়ে উদভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেড়ালেন দু’দলের ফুটবলাররা। খুচরো কিছু স্প্যানিশ টাচের দেখা মিললেও, তা দিয়ে গোল মুখ খুলল না কোনো দলেরই। স্ট্রাইকিং লাইন জমাট না হওয়ায় গোলের দেখা পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত ড্র দিয়েই শেষ হলো মরসুমের প্রথম ডার্বি।
এ দিন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই খেলা শুরু করেছিল দুই দল। একদিকে যেমন বাগানের প্রধান অস্ত্র বেইতিয়াকে আটকাতে অভিজ্ঞ কাসিম আইদারাকে নামিয়েছিলেন আলেহান্দ্রো মেনেন্ডেজ, অন্যদিকে তেমনই ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ ও ফরোয়ার্ডদের মধ্যে যাতে তালমিল না হয়, তার জন্য মাঝমাঠে লোক বাড়িয়েছিলেন বাগান কোচ কিবু ভিকুনা। প্রথমার্ধে দুই কোচই বিপক্ষকে আটকে দেওয়ার পরিকল্পনায় অনেকটাই সফল বলা যায়।
তবে খেলার ধরণে তফাৎ দেখা গেল দু’দলের। একদিকে যেমন মোহনবাগান নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে বল খেলে থ্রু বল ধরে আক্রমণ করার চেষ্টা করছিল, অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ছিল দু’প্রান্ত ধরে। এ দিন নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন পিন্টু মাহাতো, অভিষেক আম্বেকর, চুলোভা এবং সুরাবুদ্দিন। এদিন ৪ জনকেই কিছুটা চাপে দেখালো।
তবে তারমধ্যেই দু’দল কিছু সুযোগ পায়। বেইতিয়ার ফ্রিকিকে গুরজিন্দরের হেড একটুর জন্য বাইরে যায়। অন্যদিকে দু’একবার গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন বাগান গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। প্রথমার্ধের শেষদিকে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন ভিপি সুহের। কিন্তু তাঁর শট সরাসরি লাল-হলুদ গোলকিপার মাওয়াইয়ার হাতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অনেক বেশি আক্রমণে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণ তুলে আনতে থাকেন পিন্টু মাহাতো, অভিষেক আম্বেকররা। কিন্তু সজাগ ছিল বাগান ডিফেন্স। সেইসঙ্গে তেকাঠির নীচে সপ্রতিভ ছিলেন দেবজিৎ মজুমদার। পিন্টুর পাস থেকে রোনাল্ডোর শট ভালো বাঁচান দেবজিৎ। অন্যদিকে দ্বিতীয়ার্ধে কাউন্টার অ্যাটাকেই খেলছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। সুরাবুদ্দিনের মাইনাসে পা ছোঁয়ান সুহের। কিন্তু বল বার উচিয়ে চলে যায় বাইরে।
৭০ মিনিটের পর আলেহান্দ্রো নামান তাঁর দুই তুরুপের তাস স্যান্টোস কোলাডো ও বিদ্যাসাগর সিংকে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যেই মাঠের মধ্যে মাথা গরম করে ফেলছিলেন দু’দলের ফুটবলাররা। চোরাগোপ্তা ট্যাকল চলছিল। স্প্যানিশ তিকিতাকার দেখা মাঝেমধ্যে মিললেও ফাইনাল থার্ডে এসে খেই হারিয়ে যাচ্ছিল দু’দলের আক্রমণ।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে গোলের মুখ আর খোলেনি। ফলে মরসুমের প্রথম ডার্বি গোলশূন্য ভাবেই শেষ হলো। তবে স্প্যানিশ ঘরানার ফুটবলের সঙ্গে যদি দুই কোচ কিছুটা সাহস দেখাতে পারতেন, তাহলে হয়তো গোলশূন্য ভাবে শেষ হতো না কলকাতা ডার্বি।