আজ কলকাতার মহারণ। তবে সেখানে দেখা যাবে না বাঙালি কোচেদের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। দেখা যাবে না বাকযুদ্ধের লড়াই। তবে দেখা যেতে পারে তিকিতাকা বনাম তিকিতাকা। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ডার্বির আবহে এখন হঠাৎই যেন এল ক্লাসিকোর স্পর্শ!
এক জন রিয়াল মাদ্রিদের রিজার্ভ ও ‘বি’ দলে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নিয়েছেন। দানি কার্ভাহাল, আলভারো মোরাতা, নাচোর মতো স্প্যানিশ তারকা উঠে এসেছেন তাঁর কোচিংয়েই। কলকাতা ময়দানে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আলেহান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া। গত মরসুমে তাঁর কোচিংয়ে দু’বার মোহনবাগানকে হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। রবিবাসরীয় যুবভারতীতে ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিক তিনি করতে পারবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
আর এক জন এই মরসুমেই অভিষেক ঘটিয়েছেন মোহনবাগানের কোচ হিসেবে। আলেসান্দ্রোর মতো আকর্ষণীয় বায়োডেটা না থাকলেও কিবু ভিকুনা ডুরান্ড কাপের ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। কলকাতা লিগের ডার্বি শুধু তাঁর কাছে নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ নয়, ইস্টবেঙ্গল কোচের ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিক আটকানোর অগ্নিপরীক্ষাও।
দুই স্প্যানিশ কোচেরই দর্শন পাসিং ফুটবলে বিপক্ষকে নাজেহাল করে জয় তুলে নেওয়া। অথচ মহারণের আগে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দুই চাণক্য। তিনটি ম্যাচের দু’টিতে জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের চার নম্বরে ইস্টবেঙ্গল। তাঁরা হেরেছে একটি ম্যাচ। হাইমে সান্তোস কোলাদোরা গোল করেছেন পাঁচটি। খেয়েছে দু’টি। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে মোহনবাগানের পয়েন্ট চার। জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচে। হার ও ড্র একটি করে ম্যাচে। সালভা চামোরোরা গোল করেছেন তিনটি। খেয়েছে পাঁচটি। তা সত্ত্বেও কিবু হাসিখুশি ও খোলামেলা। তবে আলেহান্দ্রো সাবধানী।
শনিবার সকালে সল্টলেকের সাইয়ের মাঠে অনুশীলন করতে যাওয়ার আগে প্রায় ঘণ্টাখানেকের ভিডিও সেশন করলেন লাল-হলুদ কোচ। তাঁর অস্বস্তির প্রধান কারণ, মাঝমাঠের ছন্দ হারিয়ে যাওয়া। অথচ মোহনবাগানের আসল শক্তি মাঝমাঠেই। জোসেবা বেইতিয়ার নেতৃত্বে ঝড় তুলছেন চামোরো-রা। ডার্বির আগে ঝুঁকি না নিয়ে গোপনে বিশেষ অনুশীলন করালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।
প্রস্তুতি শেষ করেই পরে আলেহান্দ্রো দ্রুত বেরিয়ে গেলেন সহকারী কোচ জোসেপ ফেরেস (কোকো) ও ফিজিক্যাল ট্রেনার কার্লোস নোদারকে নিয়ে। সম্ভবত হোটেলে ফিরে আরও এক বার ভিডিও বিশ্লেষণে বসবেন। ফুটবলারেরা বেরোলেন অনেক পরে সমর্থকদের জয়ধ্বনির মধ্যে দিয়ে। কিবুও এ দিন সকালে মোহনবাগান মাঠে গোপনে প্রস্তুতি সারলেন।
মরসুমের প্রথম ডার্বিতে শুধু তিকিতাকা নয়, ফুটবলারদের মধ্যেও স্পেনীয় দ্বৈরথেরও হাওয়া। এই প্রথম ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ডার্বি-ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে স্পেনীয় ফুটবলারদের উপরে। ইস্টবেঙ্গলের পাঁচ জন স্প্যানিশ তারকা হলেন— বোরহা গোমেস পেরেস, হাইমে সান্তোস কোলাদো, মার্কোস দে লা এসপাদা, মার্তি ক্রেসপি ও খুয়ান গন্সালেস। যদিও বোরহাকে কলকাতা লিগে রেজিস্ট্রেশন করায়নি দল। তাঁর জায়গায় আলেহান্দ্রো ক্রেসপি খেলিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন। আর এই ম্যাচে খুয়ানের খেলার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে মোহনবাগানে এই মুহূর্তে চার জন স্পেনীয় রয়েছেন। এঁরা হলেন— সালভা চামোরা, জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান মোরান্তে ও ফ্রান গন্সালেস।
কলকাতা ডার্বিতে অভিষেকের ২৪ ঘণ্টা আগে লাল-হলুদের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ক্রেসপি বলে দিলেন, ‘‘অবশ্যই সালভা-বেইতিয়া দারুণ ফুটবলার। তবে আমাদের দলেও একাধিক ভাল ফুটবলার রয়েছে। মোহনবাগানও শক্তিশালী দল।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেছেন, ‘‘ডার্বি সব সময়ই আলাদা।’’ আর মোহনবাগানের বেইতিয়ার কথায়, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এই ম্যাচটা জেতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ তাঁদের কথা শুনে, একটা জিনিস ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, দুই দলের সমর্থকদের মত ডার্বির আবেগে ভাসছেন দুই দলের স্পেনীয় তারকারাও।