৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকেই কার্যত ‘গৃহবন্দী’ বা ‘তালাবন্ধ’ ছিল গোটা উপত্যকা। ছিল না ইন্টারনেট, মোবাইল-ল্যান্ডলাইন পরিষেবা। যার ফলে এবার ঈদেও বাড়ি ফিরতে পারেননি দিল্লীতে পড়তে আসা কাশ্মীরের অনেক ছাত্রছাত্রী। সে’দিনেই রাজধানীর বুকে জমায়েত করেন তাঁরা। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁদের ক্ষোভ। এর জেরেই এবার দল ও সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে পথে নেমে রাজধানীতে থাকা কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের ৩৭০ ধারা বিলোপের সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং৷ তাঁর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাতে নিজেদের মনের ভাব আরও ভালো ভাবে প্রকাশ করতে পারবে দিল্লীর কাশ্মীরি পড়ুয়ারা, এই আশা নিয়েই পড়ুয়াদের বোঝাতে শুরু করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও৷ কিন্তু সেখানেই তাল কাটল কয়েকজন ছাত্রের প্রশ্নবাণে।
‘জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করতে গিয়ে যেভাবে সারা দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে কাশ্মীরের অধিবাসীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হল, তাদের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধে প্রদান করা হল না, অনির্দিষ্টকালীন কার্ফু দিয়ে উপত্যকার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করা হল, তার কী প্রয়োজন ছিল?’ উঠেছিল এমন সব প্রশ্নই। তবে মন্ত্রীর দেওয়া উত্তরে আদৌ সন্তুষ্ট হননি ওই কাশ্মীরি পড়ুয়াদের দল৷ এক কাশ্মীরি পড়ুয়ার কথায়, ‘আমরা খোলাখুলিই নিজেদের মনোভাব জানিয়েছি৷ এর পরেও যদি কেউ আমাদের দেশদ্রোহী বা রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিতে চায়, তা হলে সেটা তাদের ইচ্ছে৷ যে অসুবিধে আমাদের ভোগ করতে হয়েছে, নিজেদের পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে, তাতে প্রতিদিন মনে হত পরাধীন দেশে রয়েছি আমরা৷’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারে শীর্ষ স্তরের নির্দেশে নবীন প্রজন্মের সামনে ৩৭০ ধারা বিলোপের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার জন্য এবার পথে নামছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা৷ তারই অংশ হিসেবে দিল্লীতে একটি ঘরোয়া আলোচনার আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও কাশ্মীর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং৷ তাঁর সঙ্গে আলোচনাতে যোগ দিয়েছিল জনা তিরিশেক কাশ্মীরি পড়ুয়া, যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য দিল্লীতেই থাকেন৷ ওই আলোচনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তে আখেরে ভালোই হবে, নবীন প্রজন্ম অনেক বেশি করে দেশের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, বাড়বে চাকরির সুযোগ, উচ্চশিক্ষার সুযোগ৷ পড়ুয়াদের উচিত বেশি করে এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা৷’
তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, উপত্যকার সাধারণ অধিবাসীদের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ স্বাধীনতার পরে উপত্যকার যতটা উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই কাজ শুরু করেছেন৷ তারই অংশ হিসেবে ৩৭০ ধার বিলোপের সিন্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যার প্রথম ও শেষ লক্ষ হল কাশ্মীরের সামগ্রিক উন্নয়ন৷’ সূত্রের খবর, কাশ্মীরি পড়ুয়াদের সামনে এভাবেই ৩৭০ ধারা বিলোপের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং৷ যদিও আদতে যে এতে কোনও কাজই হয়নি, তা স্পষ্ট ওই কাশ্মীরি পড়ুয়াদের অভিব্যক্তিতেই। তাঁদের সকলের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই। তাঁরা সকলেই বলছেন, যে অসুবিধে আমাদের ভোগ করতে হয়েছে, নিজেদের পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে, তাতে প্রতিদিন মনে হত পরাধীন দেশে রয়েছি আমরা৷