আলো আধারিতে প্রচারের দুনিয়া। কোনও অংশে সব আলো একসাথে পড়ে, আবার কোথাও শুধুই অন্ধকার৷ কিন্তু সেই অন্ধকারেই হয়তো লুকিয়ে ছিল মণিমুক্তো! এমনটাই হয়েছে মানসী জোশীর সঙ্গে। রাজকোটের মেয়ে মানসী-ও বিশ্বসেরা হয়েছেন প্যারা-ব্যাডমিন্টনে। সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে একই টুর্নামেন্টে সোনা জিতেছেন তিনি। অথচ উচ্ছ্বাসের বুদবুদ কেবলই পিভি সিন্ধুকে ঘিরে। মানসীর নাম তেমন করে জানলই না কেউ!
মানসীর লড়াই হয়তো একটু বেশিই জোরদার সিন্ধুর চেয়ে। কারণ সে লড়াইয়ের প্রতিকূলতা ছিল অনেক বেশি। একটি পা নেই মানসীর। তার পরেও প্যারা ব্যাডমিন্টনে দুর্দান্ত ভাল খেলে, এসএল-থ্রি ক্যাটেগরিতে তিনি ফাইনালে হারান পারুল পারমারকে।
সিন্ধুর মতোই পুল্লেলা গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমির ছাত্রী মানসী। তিনি পেশায় ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। ব্যাডমিন্টনও খেলতেন ছোটবেলা থেকেই। ২০১১ সালে অফিসে যাওয়ার সময়ে ভয়ঙ্কর পথ-দুর্ঘটনায় বাঁ পা বাদ দিতে হয় তাঁর। কিন্তু অদম্য মনের জোরে খেলা থামাননি। বেছে নেন প্যারা-ব্যাডমিন্টন। তাতেই জয় করেন অসম্ভবকে। জিতেছেন একের পর এক ম্যাচ। এবার বিশ্বের মঞ্চেও ছিনিয়ে নিলেন সেরার মুকুট।
রবিবার সিন্ধু ও মানসী দু’জনেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে, মানসী টুইট করে সিন্ধুকে অভিনন্দন জানান। লেখেন, ‘‘এই সোনাটার জন্য পরিশ্রমে ফাঁক রাখিনি আমরা।’’ টুইট করে মানসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু-ও। নগদ পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রাক্তন মহিলা আইপিএস অফিসার কিরণ বেদী টুইট করেছেন, ‘‘সিন্ধু সোনা জেতায় আমরা মানসীর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। অথচ এই মেয়েটাও তো কম যায় না!’’
মানসীর পরিবার জানিয়েছে, পা হারানোর পরে মানসী ভেঙে পড়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু হেরে যেতে রাজি ছিলেন না তিনি। তাই নকল পা লাগিয়েই তিনি নেমে পড়েন ব্যাডমিন্টন কোর্টে। এবং পিভি সিন্ধু যে দিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে সোনা এনে দেন, সেই একই দিনে মানসীও নকল পা নিয়েই বিশ্বের দরবারে এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হন।
খেলার দুনিয়া বলছে, সিন্ধু দেশের গর্ব হলেও, সারা দেশের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম মানসী। তাঁর জীবনের ওঠাপড়া বহু মানুষকে সাহস জোগায়, ভরসা জোগায়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ যে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে, তার নিদর্শন মানসী।