৮ নভেম্বর, ২০১৯। বছর তিনেক আগের এই একটি দিন, যা আজও প্রায় বেশিরভাগ দেশবাসীর কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। হঠাতই ওদিন সন্ধ্যায় ৭টায় দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলেরই চোখ তখন টেলিভিশনের পর্দায়। তারপরই হল সেই বিশেষ ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা দেশে বাতিল পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল দেশবাসীর। তার পরের দুর্দশার কথা কেউ ভুলে যাননি নিশ্চয়। নোট বাতিলের পক্ষে সেদিন প্রধানমন্ত্রী যে যুক্তি খাড়া করেছিলেন তাদের অন্যতম হল দেশ থেকে কালো টাকা উৎখাত করা এবং জাল নোটের কারবার বন্ধ করা। কিন্তু দু’বছর পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানে ধরা পড়ল মোট ১৫.৪১ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের বাতিল নোটের প্রায় ৯৯.৩০ শতাংশই (১৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকা) ফিরে এসেছে দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায়। আর, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে ধরা পড়ল, বিমুদ্রাকরণের পর বাজারে আনা সব অঙ্কের নতুন নোটের ডিজাইন জাল করা আটকানো তো যায়ইনি বরং ওই জাল নোটের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে গত তিন বছরে।
বার্ষিক রিপোর্টের ‘কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট’ অধ্যায়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেই স্বীকার করেছে, গত বছরের (২০১৭-১৮) তুলনায় ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার জাল নোটের সংখ্যা যথাক্রমে ২০.২ শতাংশ, ৮৭.২ শতাংশ এবং ৫৭.৩ শতাংশ বেড়েছে! শুধু তাই নয়। ১০০ টাকার নোট বাদে (অর্থব্যবস্থায় পুরোনো ১০০ টাকার নোট এখনও সংখ্যাধিক) বাকি সব বড় অঙ্কের নোটে জাল করা লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ২০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। প্রথম বছরই ৭৯টি জাল নোট ধরা পড়েছিল। গত বছর সেই সংখ্যা বেড়েছে ১৬১ গুণেরও বেশি! নতুন ডিজাইনের ৫০০ টাকার জাল নোটের সংখ্যা বেড়েছে ১২১ শতাংশ এবং ২০০০ টাকার জাল নোট বেড়েছে ২১.৯ শতাংশ! রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১,৮৬৫টি ৫০০ টাকার জাল নোট আরবিআইয়ের হাতে এসেছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২১,৮৪৭টি ২০০০ টাকার জাল নোট। জাল হচ্ছে নয়া ২০০ টাকার নোটও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০০ টাকার ১২,৭২৮টি জাল নোট আরবিআই পেয়েছে।