বৃহস্পতিবার ১ মাস পূর্ণ করল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন কর্মসূচী ‘দিদিকে বলো’। এই এক মাসেই বাংলার মানুষ বিপুল ভাবে সাড়া দিয়েছেন এই কর্মসূচীতে। জানিয়েছেন তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা, জানিয়েছেন তাঁদের মতামত। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমাধান হয়েছে সমস্ত সমস্যার। কাজ চলছে বাকিগুলির। ‘দিদিকে বলো’র এই সাফল্য যে শুধু মৌখিক নয় তা যে ঘোরতর বাস্তব তার প্রমাণ দিল সরকারি পরিসংখ্যান। সেই পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে এই এক মাসে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ যোগাযোগ করেছেন দিদিকে বলোতে।
গত ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে (৯১৩৭০-৯১৩৭০ নম্বরে সমস্যা, অভিযোগ আর মতামত জানানোর) ‘দিদিকে বলো’ চালু হওয়ার পর একমাসের মাথায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাতে যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁদের নানা সমস্যা ও অভিযোগ। যে বা যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৩২ শতাংশ মানুষ তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে নিয়ে পরামর্শ ও মতামত জানিয়েছেন। এছাড়াও ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে সমস্যায় পড়া, বন্যায় আটকে উদ্ধারের আশায় এবং হাসপাতালে পৌঁছে বেড না পেয়ে ‘দিদিকে বলো’র দ্বারস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, ৪০ হাজারেরও বেশি। মাত্র এক মাসে ‘দিদিকে বলো’কে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ-উন্মাদনায় আপ্লুত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাধারণের সমস্যা-অভিযোগ মেটানোর জন্য দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
‘দিদিকে বলো’র এই সাফল্য উদযাপন করতে মমতা এদিন টুইট করে জানিয়েছেন, ‘দিদিকে বলো এই জনসংযোগ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ বিপুল সাড়া দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ। গত ৩০ দিনে ১০ লক্ষের বেশি মানুষ আমাদের কাছে পৌঁছেছেন। তাঁরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন ও অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। এই সমর্থন ও স্বীকৃতির জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁদের পরামর্শ আমরা নজরে এনেছি।খুব দ্রুত যতটা সম্ভব তাঁদের অভিযোগ সমাধানের জন্য আমরা সক্রিয় হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
আইপ্যাক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক মাসে ‘দিদিকে বলো’র সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ১০ লক্ষ ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে টেলিফোনে যুক্ত হয়েছেন ৮ লক্ষ ৬৩৫ জন। ওয়েবসাইটে লগ ইন করে যোগাযোগ করা মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭১৫। সূত্রের খবর, এই পর্বে ৪২ শতাংশ মানুষ যেমন তাঁদের ক্ষোভ ও সমস্যার কথা জানিয়েছেন, ৩২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তাঁদের মতামত ও পরামর্শ, তেমনই দিদিকে বলো উদ্যোগের প্রশংসা করে যোগাযোগ করেছেন ২২ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ। গত এক মাসে বিবিধ কারণে যোগাযোগ করা লোকের সংখ্যা ৪ শতাংশ। এর মধ্যে আচমকা বিপদে এবং সঙ্কটে পড়ে ২১৪ জন ব্যক্তি ‘দিদিকে বলো’র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পেরেছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। তার মধ্যে ১৬১ জনের সমস্যা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। আই-পাক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘দিদিকে বলো’র উদ্দেশ্য হল, রাজ্যের অন্তত ৮০ শতাংশ পরিবার, সংখ্যার নিরিখে যা ১.৬ কোটি তাদের কাছে পৌঁছনো। আগামী আরও ১৯ মাস ধরে চলবে এই কর্মসূচি।
কেউ পেয়েছেন মাথার ওপর স্থায়ী আস্তানা, কেউ খুব সহজেই পেয়েছেন কাস্ট সার্টিফিকেট, কেউ এক ফোনেই ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে, কেউ বিনামূল্যে করাতে পেরেছেন মহার্ঘ্য অপারেশন, কেউ পেয়েছেন মৎস্যযান, কেউ পেয়েছেন হাঁস-মুরগি, কারোর এলাকায় হচ্ছে পাকা রাস্তা। এরকম ভাবে গোটা বাংলার মানুষ উপকৃত হয়েছেন দিদিকে বলো। এরকম নানা সাফল্যের কাহিনী সৃষ্টি করে সগৌরবে এক মাস পূর্ণ করল দিদিকে বলো।