মিড–ডে মিলের মাধ্যমে পড়ুয়ারা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায়, রাজ্য সরকারের এখন লক্ষ্য সেটাই। মিড–ডে মিল নিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানাল স্কুলশিক্ষা দফতর। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই খাতে বরাদ্দ অনুযায়ী প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকের পড়ুয়াদের পেটভরা পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। প্রত্যেকটি পড়ুয়া যাতে রান্না করা খাবার পায় এবং তা যেন পুষ্টিকর হয় জেলাশাসকদের তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, কোনও দিন মাছ, কোনও দিন ডিম খাওয়াতে বলে দফতরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মেনুর কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবার পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে কয়েকটি জেলায় মিড–ডে মিল এর খাবারের মেনু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার মিড–ডে মিলের টাকাই দেয় না, সব খরচাই রাজ্যে সরকার খরচ করে, চালটাও রাজ্য বিনা পয়সায় দেয়। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি পড়ুয়া যাতে পেটভরে পুষ্টিকর খাবার ডাল, ভাত, তরকারি খেতে পায় সেদিকে জোর দিতে বলেন তিনি। কোন স্কুলে কী খাওয়ানো হচ্ছে, সবাই মিড–ডে মিল এ পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে কি না, রান্নার মান কেমন সেদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নজর দিতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই সোমবার স্কুলশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়। সম্প্রতি রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে মিড–ডে মিল নিয়ে বিশেষ পরিদর্শন শুরু হয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর ও বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং হুগলির জেলাশাসক মিড–ডে মিলের সাপ্তাহিক মেনুর তালিকা তৈরি করে স্কুলে স্কুলে পাঠান। এই তালিকা অনুযায়ী সপ্তাহে দু’দিন ডিম অথবা মাছ, একদিন পোস্ত, দু’দিন চাটনি। এছাড়াও ডাল, সয়াবিনের তরকারি দিতে বলা হয়। হুগলিতে একদিন মুরগির মাংস এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ডিম অথবা মাছ দিতে বলা হয়। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। তাদের বক্তব্য ছিল, প্রাথমিকে পড়ুয়াদের জন্য মাথাপিছু ৪ টাকা ৪৮ পয়সা এবং উচ্চপ্রাথমিকে ৬ টাকা ৭১ পয়সা বরাদ্দ। এই টাকায় মেনু অনুযায়ী খাবার দেওয়া কীভাবে সম্ভব?
কলকাতার প্রাথমিক জেলা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, “কয়েকজন জেলাশাসকের জারি করা নির্দেশিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা কেটে গেছে”। কলকাতার স্কুলগুলিতে মিড–ডে মিলে সপ্তাহে দু’দিন সোম ও শনিবার ডিম এবং বাকি দিনে ডাল, তরকারি দেওয়া হয়। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, “বরাদ্দ না বাড়িয়ে মেনু ঘোষণা বাস্তবসম্মত ছিল না। যে খাবার দেওয়া হয় সেটা যাতে ঠিকমতো বাচ্চারা পায় সেটা দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন জরুরি। পরিদর্শন নিরপেক্ষভাবে হলে মিড–ডে মিলের মান আরও বাড়বে”।