কল্পনার লাগাম একটু আলগা করে দিলে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার সম্ভাবনায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে পারে ফুটবল রোমান্টিকদের। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দু’দলের লড়াই তো ফাইনালের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়। ব্রাজিল বনাম জার্মানি! ই-গ্রুপে ব্রাজিল প্রথম আর এফ-গ্রুপে জার্মানি দ্বিতীয় হলে শেষ ষোলোতেই দেখা হয়ে যাবে দুই পরাশক্তির।
এখন পর্যন্ত দু’দল যেভাবে এগোচ্ছে তাতে সেই সম্ভাবনা প্রবল। শেষ ষোলোর সম্ভাব্য মহারণ নিয়ে রোমাঞ্চে বুঁদ হওয়া দূরে থাক, এ নিয়ে আপাতত ভাবারই সুযোগ নেই ব্রাজিল-জার্মানির। একটু এদিক-ওদিক হলে আজই শেষ হয়ে যেতে পারে তাদের বিশ্বকাপ!
দুই ম্যাচ শেষেও নকআউটের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেনি ব্রাজিল ও জার্মানি। গ্রুপ পর্বের শেষ অঙ্কে দুই পরাশক্তির সামনেই আজ বিশ্বকাপে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে ই-গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ আজ সার্বিয়া। আর কাজানে এফ-গ্রুপের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
মোটা দাগে সমীকরণটা এমন যে ব্রাজিলের চাই ড্র আর জার্মানির জয়। সার্বিয়ার সঙ্গে ড্র করলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যাবে সেলেকাওরা। তবে গ্রুপসেরা হতে বড় ব্যবধানে জিততে হবে আর হারলে বেজে যেতে পারে বিদায়ঘণ্টা। ব্রাজিলের ভাগ্য তবু নিজেদের হাতে আছে, কিন্তু জার্মানি জিতেও বাদ পড়ে যেতে পারে।
এফ-গ্রুপের সমীকরণ এমনই জটিল যে মনে হতে পারে, বিশ্বকাপ তো নয়, এ যেন গণিত অলিম্পিয়াড! কী হলে কী হতে পারে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গেলে সেটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। এটাই একমাত্র গ্রুপ যেখান থেকে এখনও কেউ শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে পারেনি, একইভাবে কারও বিদায়ঘণ্টাও বাজেনি। প্রথম দু’ম্যাচ জেতা মেক্সিকো যেমন বাদ পড়তে পারে, তেমনি প্রথম দু’ম্যাচে হারা দক্ষিণ কোরিয়া চলে যেতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
দু’দলের মাঝে থাকা জার্মানি ও সুইডেনের ঝুলিতে রয়েছে সমান তিন পয়েন্ট। মেক্সিকোর বিপক্ষে সুইডেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জার্মানি জিতলে তিন দলের পয়েন্ট সমান (ছয়) হয়ে যাবে। তখন গোল ব্যবধানে পিছিয়ে দলটির কপাল পুড়বে। অন্যদিকে মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া জিতলেও তিন দলের পয়েন্ট সমান (তিন) হয়ে যাবে।
সেক্ষেত্রেও ভাগ্যনির্ধারক হয়ে উঠবে গোল ব্যবধান। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে মেক্সিকো।সুইডেনের সঙ্গে ড্র করলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখবে মেক্সিকো।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে দুই বা তার বেশি গোলের ব্যবধানে জিতলে জার্মানিকেও অন্যদের দিকে তাকাতে হবে না। মেক্সিকোর কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর সুইডেনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে পাওয়া নাটকীয় জয়ে নবজীবন পেয়েছে জার্মানরা। দক্ষিণ কোরিয়াকে দুরমুশ করে সেটা উদযাপন করতে চান ক্রুসরা।
জার্মানির মতো ব্রাজিলও এখনও গায়ে সেঁটে থাকা ফেভারিট তকমার স্বার্থকতা প্রমাণ করতে পারেনি। সুইজরল্যান্ডের সঙ্গে ড্রর পর কোস্টারিকার বিপক্ষে তাদের ২-০ ব্যবধানের জয়টা এসেছে ইনজুরি টাইমের দুই গোলে। তাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছুটলেও ব্রাজিল সমর্থকদের মন ভরেনি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেইমাররা জিততে চান ফেভারিটের মতো।
শেষ ষোলোর সমীকরণ মেলাতে এক পয়েন্ট লাগলেও ব্রাজিল কোচ তিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ব্রাজিল কখনও এক পয়েন্টের জন্য খেলে না। সার্বিয়াকে হারিয়েই আমরা পরের রাউন্ডে যেতে চাই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে নিজেদের ব্রান্ডের ফুটবল খেলা।’