মোদী সরকার এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল এনআরসি। যার জেরে আসামে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বহু মানুষ। ঘরছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন অনেকে। এবার এনআরসির খসড়া থেকে নলবাড়ির এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের নাম বাদ যাওয়াতে ধর্নায় বসলেন ওই পরিবারের সকলে।
আদালত ভবন ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ভবন যাঁর দানের জমিতে তৈরি, নলবাড়ির সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী মহব্বত আলির ছেলে ও নাতিদের নামই নেই এনআরসি খসড়াতে! চূড়ান্ত এনআরসিতেও নাম উঠবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। কারণ, বাপ-ঠাকুরদার বংশপরিচয়ের প্রমাণ তথা ‘লিগ্যাসি’ বেহাত হয়ে গিয়েছে। এবং সেই ‘লিগ্যাসি’ নম্বর ব্যবহার করে এনআরসিতে নাম তোলার আবেদন করেছেন ২৮ জন ‘অচেনা’ ব্যক্তি! শুনানি, আবেদনে কাজ হয়নি কোনও। এক সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে নলবাড়ির প্রভাবশালী পরিবারটিকে তাই ধর্নায় বসতে হল নাগরিকত্বের দাবিতে।
‘লিগ্যাসি ডেটা’-র বহু তথ্যই বেহাত হয়েছে এমন অভিযোগ শোনা গেছিল আগেও। ‘লিগ্যাসি কোড’-এ রয়েছে বিস্তর গরমিল। সূত্রের খবর, রাজ্যে অন্তত ৩০০০-এর বেশি ‘লিগ্যাসি ডেটা’ বেহাত বা বিক্রি হয়েছে। খোদ রাজ্য সরকার বিধানসভায় তথ্য দেখিয়ে দাবি করেছে, ‘লিগ্যাসি’ অপব্যবহারের সন্দেহ অমূলক নয়।
নলবাড়ি জেলায় ফের মিলল সেই প্রমাণ। ৮৫ বছরের কুতুবুদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা সংগ্রাহী মহব্বত আলির ছেলে। মহব্বত আলির দেওয়া জমিতে নলবাড়ি এএসটিসি বাস স্ট্যান্ড, আদালত, হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। ১৯৭২ সালে তিনি মারা গেলে স্ত্রী মেহরউন্নিসা স্বামীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পাচ্ছিলেন। ১৯৮৮ সালের বিধ্বংসী বন্যায় তাঁদের অনেক নথি নষ্ট হয় ও ভেসে যায়। এখন ১৯৩৩ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নথি, আধার, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড থাকলেও বাবার ‘লিগ্যাসি’ প্রমাণ করতে গত দু’বছর ধরে কালঘাম ছুটছে কুতুবুদ্দিনের। মহব্বত ও কুতুবুদ্দিনের ‘লিগ্যাসি’ কোড ইতিমধ্যে অচেনা ২৮ জন ব্যবহার করেছেন বলে জানতে পারেন তাঁরা। কুতুবুদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম জানান, ওই অচেনা ২৮ জনের নামে তাঁরা এফআইআর করেছেন। বারবার শুনানিতে গিয়েও সুরাহা হয়নি। নিশ্চিত হয়নি নাগরিকত্ব। নুরুলবাবুর আক্ষেপ, ৩১ অগস্টের পরে হয়তো বেআইনি ভাবে নাম তোলা লোকেরা নাগরিক হয়ে যাবে। আর তাঁদের মতো পরিবারকে হেনস্থা হতে হবে। জুটবে অপমান, এমনকি বিদেশি অপবাদে কারাবাসের মুখেও পড়তে হতে পারে।