মাস দেড়েক আগে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের প্রতিচ্ছবি ফিরে এল হেডিংলেতে। সেদিন অসাধারণ ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন বেন স্টোকস। আর রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাসেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অনেকটা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন তারকা অলরাউন্ডারটি। কার্যত একার কাঁধে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন স্টোকস। তাঁর অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসে ভর করে হেডিংলে টেস্টে ১ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে ইংরেজ বাহিনী। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিনশো রানের বেশি তাড়া করে জয় পেল ইংল্যান্ড। আর অ্যাসেজের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার এমন জয়ের নজির দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।

৩৩০ মিনিট ক্রিজে থেকে ২১৯ বলে স্টোকসের নায়কোচিত ১৩৫। যা সাজানো ১১ বাউন্ডারি ৮ ওভার বাউন্ডারিতে। স্টোকস যেন টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন করে অক্সিজেন দিয়ে গেলেন। হেডিংলে টেস্টের পরতে পরতে নাটকের। শেষ উইকেটে যথন বুক চিতিয়ে লড়ছেন, তখন টি-টোয়েন্টি মোডে স্টোকস। সুইচ হিটে ছক্কা। তখন জয়ের জন্য ৮ রান বাকি। লিয়ঁর বলে মিস টাইমিংয়েও ওভার বাউন্ডারি। ক্রিকেট ঈশ্বর যেন রবিবার রাতে নেমে এসেছিলেন স্টোকসের শরীরে। তার আগে জোস হ্যাজেলউডের বাউন্সারে হেলমেট ভেঙে যায় তাঁর।১৯৮১ সালের হেডিংলেতে অ্যাসেজ সিরিজের টেস্ট এখনও ইতিহাসে ইয়ান বোথামের টেস্ট হিসেবে চিহ্নিত। যেমন ২০০১ সালে হেডিংলে টেস্ট চিহ্নিত মার্ক বুচারের টেস্ট হিসেবে। তেমনই এই টেস্ট ভবিষ্যতে চিহ্নিত হবে বেন স্টোকসের টেস্ট হিসেবে। অ্যাসেজের ইতিহাসে অন্যতম উত্তেজক টেস্ট হিসেবে থাকবে ২০১৯ সালের হেডিংলে। ২৮৬-৯ অবস্থায় ইংল্যান্ডের অতি বড় সমর্থক ভাবেননি এই টেস্ট জিততে পারে জো রুটের টিম। শুধু ভেবেছিলেন একজন, বেন স্টোকস।

এ দিন স্টোকস ব্যাট করতে নেমেছিলেন ২ রান নিয়ে। ইংল্যান্ডের স্কোর ১৫৫-৩। টেস্টের চতুর্থ দিন জনি বেয়ারস্টো (৩৬), জস বাটলার (১), ক্রিস ওকসের (১) ব্যর্থতা একাই ঢেকে দিলেন স্টোকস। স্বাভাবিক ভাবেই টেস্টের সেরা স্টোকস। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতানো নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘সহজাত মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। লড়াই ছাড়িনি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। সেটা যে ভাবে শেষ হয়েছে, তার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আসলে আজকের দিনটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।’ এখানেই শেষ নয়। স্টোকসের সংযোজন, ‘সারা দিন এ ভাবে রান করে যেতে হলেও আমি তৈরি ছিলাম।’

অ্যাসেজের ইতিহাস তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেও অন্যতম সেরা টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী থাকল হেডিংলে। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৩৫৯ রানের প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল না হলেও সেই ধাক্কা সামলে উঠেছিল ইংল্যান্ড। আগের দিনের ১৫৬-৩ নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে সাতসকালেই বড় ধাক্কা খায় তারা। ফিরে যান জো রুট (৭৭) ও জো ডেনলি (৫০)। বেয়ারস্টো (৩৬) চেষ্টা করলেও চাপের মুখে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। একটা সময় ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান তুলে ফেললেও শেষ দিকে ফের দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে ইংরেজরা। তবে তারই মাঝে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো একদিক ধরে রেখে লড়াই চালিয়ে যান স্টোকস।

টেল এন্ডারদের আগলে নিজেই যথাসম্ভব স্ট্রাইক নিতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৮৬ রানের মাথায় ইংল্যান্ডের নবম উইকেটের পতন হয়। ১৫ রান করে জোফ্রা আর্চার ফিরে যাওয়ার পরও হাল ছাড়েননি স্টোকস। এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে নিয়ে সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণ গড়ে তোলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২১৯ বলে ১৫৩ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ৩৬২ রান। অজি বোলারদের মধ্যে হ্যাজেলউড নেন চারটি উইকেট। কিন্তু স্টোকসকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ফের একবার অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন বেন স্টোকস।