বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গা পুজো। চিরাচরিত এই ধারণাতে ভর করে বাংলা ভেসে যায় এই উৎসবে। যদিও বাঙালির জীবনে মেতে ওঠার মতো পুজোর সারা বছর লেগেই আছে। তবুও বাঙালির প্রিয় আকর্ষণ এই দুর্গাপুজো। কিন্তু কয়েকবছর বাংলার উৎসবের মেজাজে এক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। দুর্গাপুজোর আগেই একটা অংশের বাঙালি মেতে উঠছে গণেশ পুজোয়।
কুমোরটুলিও সাজছে এই নতুন ট্রেন্ডে। গণেশ ঠাকুরের মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে মূর্তি-পাড়া। অর্ডার আসছে উত্তর থেকে দক্ষিণ – গোটা কলকাতা থেকেই। মাত্র দুবছর আগেও যেখানে কুমোরটুলিতে গণেশের অর্ডার পড়ত পাঁচ-সাতটা, সেখানে এখন অর্ডার হচ্ছে প্রায় দশগুণ। তাতে পটুয়াপাড়ার শিল্পীদের মুখে হাসি ফুটছে নিঃসন্দেহে।
কিন্তু তলিয়ে দেখলে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পরিষ্কার এই গণেশ পুজো বৃদ্ধির কারণ মূলত রাজনৈতিক। কারণ কলকাতার ছোট-বড় প্রায় সব পুজোই তৃণমূল নেতাদের ‘অধীনে’। অথচ রাজ্যে ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিজেপি। ভোট রাজনীতির স্বার্থেই তাই বাঙালির প্রিয় দুর্গাপুজো দখলের ছক কষেছে তাঁরাও। কিন্তু এখনও সেরকম কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি গেরুয়া শিবিরের বঙ্গ নেতারা। কলকাতার কয়েকটি পুজোয় বিজেপি নেতারা ‘অনধিকার’ প্রবেশের চেষ্টা করেও পুজো কমিটির সিংহভাগের বিরোধিতায় পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাই সুকৌশলে বিজেপি নেতারা আপাতত আঁকড়ে ধরছেন গণেশ পুজোকেই।
বিজেপি নেতা-নেত্রীর হাত ধরেই যে বাংলায় গণেশ পুজোর ঢল বাড়ছে তা বোঝা যায় কুমোরটুলির মূর্তি অর্ডার দেওয়ার তালিকা থেকেই। বেশিরভাগই বিজেপি নেতা-সমর্থক জানা যাচ্ছে কুমোরটুলির আবহ থেকে। এই ভোল-বদলের পালায় বাঙালির একাংশ মেতে উঠলেও এখনও দুর্গা পুজোর আবহে আঘাত হানতে পারে নি। তবুও আশঙ্কার মেঘ থেকেই যাচ্ছে শরতের আকাশে।