সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলার একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি ব্রিজের ওপরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন বহু মানুষ। সেখান থেকে আচমকাই দড়ি বেঁধে আড়াআড়ি ভাবে নামানো হচ্ছে একটি মৃতদেহ। সে দেহ থেকে একে একে নীচে পড়ে যাচ্ছে ফুলের মালা। নীচে দাঁড়িয়ে আছেন জনা পাঁচেক মানুষ। ২০ ফুট উঁচু ব্রিজ থেকে সে দেহ নীচে নামানো হলে তাঁরা দেহটি ধরে নিয়ে একটু দূর দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন সৎকারের উদ্দেশ্যে। তামিলনাড়ুর ভেলোরের বানিয়ামবাদি তালুকের নারায়ণপুরম গ্রামের এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠেছে নেট-দুনিয়া।
একটি মৃতদেহ নিয়ে এমন করার কারণ খুঁজতে গিয়ে এ শিহরন বেড়েছে বই কমেনি। কারণ মৃত ব্যক্তি দলিত সম্প্রদায়ের ছিলেন। দলিতদের দেহ সৎকারের কোনও আলাদা জায়গা নেই গ্রামে। ফলে গ্রাম পেরিয়ে অন্যত্র যেতে হয় তাঁদের। সে জন্য যে সেতুটি পার করতে হয়, সেই সেতুর উপর দিয়ে আবার দলিত দেহ নিয়ে যাওয়ার ‘নিয়ম’ নেই। তাই যত বার বানিয়ামবাদি তালুকের দলিত সম্প্রদায়ের কোনও ব্যক্তি মারা যান, তত বারই এমন অমানবিক ভাবে তাঁর দেহ নামাতে হয় ব্রিজ থেকে নীচে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় হিন্দু ধর্মের মানুষদের বাস। তাঁদের আলাদা শ্মশান রয়েছে। তার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারেন না দলিতরা। এমনকী ওই ব্রিজের উপর দিয়ে দলিত দেহও নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। এ ভাবেই ব্রিজ থেকে দেহ বেঁধে নামানোর ঘটনা চলে আসছে বহু দিন ধরে।
চলতি মাসের ১৭ তারিখে কুপ্পন নামের এক ৫৫ বছরের ব্যক্তি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার পরেই তাঁর সৎকারের প্রস্তুতি শুরু করে পরিবার। কুপ্পনের দেহ স্ট্রেচারে বেঁধে গোরস্থানের দিকে রওনা দেন আত্মীয়রা। কিন্তু যথারীতি, ব্রিজে ওঠার মুখে বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। অভিযোগ, তাঁদের বলা হয়, এটা হিন্দুদের এলাকা, এখান দিয়ে দলিতের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না। তখনই এক দল আত্মীয় ব্রিজের নীচে গিয়ে দাঁড়ান। ব্রিজ থেকে নামানো হয় দেহ। চূড়ান্ত অমানবিক সে দৃশ্য বন্দি হয় উপস্থিত কোনও আত্মীয়র মোবাইল ক্যামেরায়। বুধবার কোনও ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও ফুটেজ।
কুপ্পনের ভাগ্নে, ২১ বছরের বিজয় দাবি করেছেন, “আমি আজন্ম এমনটাই দেখছি। এটা ঘটে চলেছে তারও অনেক আগে থেকে। আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে তাঁকে সৎকার করা যায় না এই গ্রামে। কারণ সৎকারের জায়গাটি কেবল হিন্দুদের অধিকার। আমাদের কারও মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না গ্রামের সেতুটি দিয়েও। সেখানেও শুধু হিন্দুদের অধিকার। এর আগে যখন এই ব্রিজ তৈরি হয়নি, বছর ১৫ আগে, তখন সৎকারের জায়গা না পেয়ে আমরা জলে ভাসিয়ে দিতাম দেহ। এখন তাও ব্রিজ থেকে ঝুলিয়ে নামিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা এ বিষয়ে অনেক বার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এতে কোনও লাভ হয়নি।” আর এই ঘটনায় যেন আরও এক বার স্পষ্ট হল এ দেশে জাত-পাত নিয়ে প্রচলিত চূড়ান্ত কুসংস্কারের ছবি।