নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বরাবরই বাংলাকে বঞ্চিত করেছে মোদী সরকার। বাংলার শাসক দল তৃণমূলের তরফে বারবারই উঠেছে এই অভিযোগ। অতীতে একাধিকবার এ নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে এবার আর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হতে হল না বাংলাকে।
কারণ পুনর্গঠনের নামে কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের (সিপিডব্লুডি) অফিস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আদালতে জোর ধাক্কা খেল মোদী সরকার।
কর্মীদের সহমতে না নিয়ে বা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে কেন এই সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা ক্যাটের। তাই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত (ক্যাট)। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সচিবকে আগামী তিন মাসের মধ্যে বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। জাতীয় স্তরে বৈঠক ডেকে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পরই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্যাট।
অন্যদিকে, এরই অনুষঙ্গ হিসেবে কর্মী বদলির মামলায় কেন্দ্রীয় পূর্তদফতরের ডিজিকে আদালতের (ক্যাট) কাছে মাথা নত করতে হয়েছে। ওই মামলায় আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও অফিস পুনর্গঠনের উদ্যোগ হিসেবে কর্মীদের রদবদল করায় সিপিডব্লুডি’র ডিজি প্রভাকর সিং আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সংস্থার পুনর্গঠনের জন্যই ওই বদলি দেখানো হলেও তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে সরব কেন্দ্রীয় পূর্তদফতরের ইঞ্জিনিয়াররা।
ইতিমধ্যেই তাঁদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। ডিওপিটি অর্থাৎ ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের গাইডলাইনকেও অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ। যদিও আদালত অবমামনার ওই মামলায় প্রভাকর সিং ফের ক্যাটের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন এবং আবাসন মন্ত্রকের অধীন প্রিন্টিং ও স্টেশনারি দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের অফিস এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মোদী সরকার। যার ফলে কলকাতার ২৪টি অফিসের মধ্যে ১৭টি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ কলকাতায় কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরে বছরে ৫৭০ কোটি টাকার কাজের সুযোগ রয়েছে বলেই অ্যাসোসিয়েশনের দাবি। যেখানে বিহার, মুম্বই, চেন্নাই, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যায় সুযোগ কম।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগীয় কাউন্সিলের বৈঠকে পদাধিকারবলে জেসিএমের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সচিব জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের পুনর্গঠনের বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ, দাবিদাওয়া উঠছে তা খতিয়ে দেখা হোক। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুনর্গঠনের নামে উপযুক্ত কোনও পরিকল্পনা না করেই কলকাতা থেকে অফিস রাঁচি-সহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এর প্রতিবাদেই সরব হয় ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন। মামলা গড়ায় আদালতে (ক্যাট)। যার শুনানিতে গত পয়লা আগস্ট ক্যাটের বেঙ্গালুরু বেঞ্চের বিচারপতি কে বি সুরেশ এবং সি ভি শঙ্কর সম্প্রতি কেন্দ্রকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের কর্মীদের সহমতে না নিয়ে কেন এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সচিবের পর্যবেক্ষণকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।